দুদিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগদান শেষে কম্বোডিয়া থেকে আজ শনিবার (৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা আসবেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
তাইওয়ান ইস্যুতে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঢাকাকে পাশে চাইতে পারেন ওয়াং ই। অপরদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বেইজিংয়ের আরও জোরালো ভূমিকা চাইতে পারে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে দুদেশের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
পরিবর্তিত বিশ্বে চলমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মেরুকরণে বাংলাদেশকে চীনের পাশে চাইতে পারে বেইজিং। সফরকালে দুদেশের মধ্যে ৫ থেকে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সরঞ্জাম সরবরাহ সংক্রান্ত একটি চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। অবশিষ্ট চুক্তি ও এমওইউ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বৃহস্পতিবার বলেন, সফরকালে একাধিক এমওইউ এবং চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। কিছু কিছু নবায়ন আছে, কিছু আছে নতুন সহায়তা চুক্তি। বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। অবশিষ্ট চুক্তি ও এমওইউ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। যেসব চুক্তি ও এমওইউ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে সেগুলো সই হবে।
এসব চুক্তি এবং এমওইউ বাস্তবায়নে চীনের কাছ থেকে নতুন কী পরিমাণ ঋণ নেওয়া হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন ঋণ অবশ্যই নেওয়া হবে। তবে কী পরিমাণ ঋণ নেওয়া হবে সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। কারণ চুক্তি ও এমওইউ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে আসেন। ওই সময়ে চীন বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থায়ন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এসব প্রতিশ্রুতির কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে; কিছু এখনো বাকি আছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ব্যাপকভাবে চীনের অনুকূলে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস), ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফোরাম (আইপিইএফ), কোয়ার্ড প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত হতে চাইতে পারেন। তাইওয়ান ইস্যুতে ইতোমধ্যে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিনপিং এক বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশকে পাশে চেয়েছেন।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন ও বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার। দুদেশ পরস্পরের ইস্যু এবং সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে সর্বদা সমর্থন করে থাকে। চীনের এক চীন প্রিন্সিপাল সমর্থন এবং তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অবস্থানকে চীন স্বাগত জানায়।
বাংলাদেশের কাছে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু সবচেয়ে বড়। জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চীনের জোরালো ভূমিকা কামনা করব।
আগামীকাল রোববার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার পর ওয়াং ই মঙ্গোলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। তিনি ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন।