২০ বছর পর সেই ভয় ফিরে এলো বিলকিসের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন বিলকিস বানু। ছবি : ইন্টারনেট

জীবন থেকে এরইমধ্যে এক এক করে ২০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এতো বছরেও বিভীষিকাময় সেই স্মৃতি মন থেকে মুছে যায়নি। প্রলেপ লাগেনি ক্ষতে। বরং সেই ক্ষত এখন নতুন করে দগদগে হয়ে উঠছে। গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ২০ বছর আসামিরা কারামুক্ত হওয়ায় ভুক্তভোগী বিলকিস বানুর চোখে এখন নতুন শঙ্কা ও ভীতি। রাজ্য সরকারের কাছে নিজের নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ জীবন প্রার্থনা করেছেন এ নারী।

ভারতের গুজরাট রাজ্যে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। তার তিন বছরের মেয়েকে চোখের সামনে আছড়ে মেরেছিল। হত্যা করা করেছিল পরিবারের মোট আট সদস্যকে।

universel cardiac hospital

সেই ঘটনায় করা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ আসামি গত ১৫ আগস্ট গুজরাট জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

রাষ্ট্রের ন্যায়বিচারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বিলকিস ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, দুদিন আগে আমি যখন শুনলাম আমার জীবন ও আমার পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া সেই ১১ জন কারামুক্তি পেয়েছে, আমি সত্যিই ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এখনো বোবা হয়ে আছি। সেই ২০ বছর আগের আতঙ্ক আবার আমাকে গ্রাস করলো।

২০০২ সালে বিলকিসের বয়স ছিল ২১ বছর। এখন তিনি ৪১ বছর বয়সী নারী। গতকাল বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ২০ বছর আগেই সেই খুনি-ধর্ষকদের মুক্তিতে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিলকিস বলেন, একজন নারীর প্রতি ন্যায়বিচার এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে? আমি তো শীর্ষ আদালতে বিশ্বাস রেখেছিলাম, সিস্টেমে বিশ্বাস রেখেছিলাম, একটু একটু করে আমার ক্ষতগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচতে শিখছিলাম। দোষীদের মুক্তি আমার শান্তি ছিনিয়ে নিলো, ন্যায়ের প্রতি আমার বিশ্বাস নড়ে গেলো। আমি শুধু আমার কথা বলছি না। প্রতিটি নারী, যারা আদালতে ন্যায়ের জন্য লড়ছেন, তাদের সবার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে।

আসামিদের কারামুক্তির ব্যাপারে গুজরাট সরকারকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে বিলকিস বলেছেন, আমাদের এই ক্ষতিটা করবেন না। ভয়হীন, শান্তির জীবন বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিন।

তবে গুজরাটের বর্তমান বাস্তবতায় ভুক্তভোগী এ নারীর আবেদনে রাজ্যের সাড়া দেওয়ার তেমন আলামত নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

দুঃসময়ে স্ত্রীর পাশে থাকা বিলকিসের স্বামী ইয়াকুব রসুল বলেন, মুহূর্তে ১৮ বছরের লড়াইটা শেষ হয়ে গেলো। আমাদের খুব ভয় করছে। কী করব জানি না। বাড়িঘর ছাড়তে হবে কি না, বুঝতে পারছি না।

ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরোধী শিবিরগুলো বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এই গংদের দলে কাজে লাগাতে চায় বিজেপি। সে কারণে আসামিদের কারামুক্তিই আপাতত বিলকিসের জন্য বিজেপির উপহার!

শেয়ার করুন