চট্টগ্রামের পটিয়ায় সম্পত্তির জন্য মাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বাবার পিস্তল ব্যবহার করেছিলেন ছেলে মাঈনুদ্দীন মাঈনুল (২৯)। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার বিকেলে নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে মাইনুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার এসব তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, মাঈনুল ছোটবেলা থেকেই বেশ বখাটে ও উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির। সবসময়ই তার মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কাজ করতো। তার বাবা পটিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল আলম চলতি বছরের ১৩ জুলাই বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
শামসুল আলম বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রেখে যান। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই এই সম্পত্তি নিয়ে মাঈনুলের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছোট ভাই ও বোনের সাথে বিরোধ দেখা দেয়।
এ বছর ঈদুল ফিতরের সময় তার দুই প্রবাসী ভাই-বোন দেশে আসেন। এরপর করোনার কারণে তারা আর ফিরতে পারেননি। এর মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে তাদের সাথে মাঈনুলের বিরোধ দেখা দেয়। এর ফলে পরিবারের সাথে তার বেশ দূরত্ব তৈরি হয়। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মায়ের সাথেও ঝগড়ায় লিপ্ত হয় মাঈনুল।
গত ১৬ আগস্ট দুপুরেও একই কারণে মা ও বোনের সাথে ঝগড়া হলে মাঈনুল কোমড় থেকে পিস্তল বের করে প্রথমে তার বোনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে মা জেসমিন আক্তারকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিটি তার চোখের নিচ ভেদ করে বের হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
র্যাব আরও জানায়, মাঈনুল মাকে হত্যার পরও শান্ত ছিল। মানুষ হত্যা করলে সাধারণত বিচলিত হয়ে যায়। কিন্তু মাঈনুল কৌশলে পালিয়ে যায়। সে হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি কোমড়ে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। পরে সাতকানিয়ার রসুলপুর এলাকার একটি গুদামঘরে সেটি লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে একজনের সহযোগিতায় স্থানীয় একটি ফ্যাক্টরির গোডাউনে রাত কাটায়। পরদিন টিকিট না নিয়ে কেরানীহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
নুরুল আবছার বলেন, মাঈনুল সন্দেহ করেছিল বাবার সব সম্পত্তি তার মা দুই ভাই-বোনকে দিয়ে তাদের সাথে অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে পারে। এরপর থেকেই সে তার মায়ের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। সে মাদকাসক্ত ছিল। হত্যার কাজে ব্যবহৃত পিস্তলটি সে তার বাবার ড্রয়ার থেকে পেয়েছে। সেটি সে ব্যবহার করতো। তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। তবে পরিবারের দাবি, তার নামে ৭-৮ টি মামলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট দুপুরে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে পটিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির সদ্য প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আলমের স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে গুলি করে হত্যা করে তাদের ছেলে মাঈনুল। এ ঘটনার দিন রাতে মাঈনুলের বোন শায়লা শারমিন নিপা বাদী হয়ে পটিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার ভাই মাঈনুলকে প্রধান ও একমাত্র আসামি করা হয়।