যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন লিজ ট্রাস। মঙ্গলবারই (৬ সেপ্টেম্বর) বরিস জনসনের কাছ থেকে দায়িত্বও বুঝে নিয়েছেন তিনি। আর এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল করেছেন ট্রাস।
মূলত মন্ত্রিসভার প্রধান প্রধান পদগুলোতে নিজের মিত্র ও ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ দিয়েছেন ব্রিটেনের নতুন এই প্রধানমন্ত্রী। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিস জনসনের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিজের প্রধান মিত্রদের বড় বড় পদগুলোতে বসিয়ে পুরস্কৃত করেছেন লিজ ট্রাস। কোয়াসি কোয়ার্টেং চ্যান্সেলর হিসেবে, জেমস ক্লিভারলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রীতি প্যাটেলের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিচ্ছেন সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান।
এছাড়া লিজ ট্রাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন থেরেসি কফি যুক্তরাজ্যের নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন।
এদিকে মন্ত্রিসভায় নিজেদের জায়গা হারানো বড় নামগুলোর মধ্যে ডমিনিক রাবের নামটিও রয়েছে। সাবেক ট্রান্সপোর্ট মন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপস এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্টিভ বার্কলেও পদ হারিয়ে ব্যাকবেঞ্চে ফিরে আসছেন। তারা ডমিনিক রাবের মতো টোরি দলের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় ট্রাসের পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাককে সমর্থন করেছিলেন।
অন্যদিকে লিজ ট্রাসকে সমর্থন করেছিলেন নাদিন ডরিস। তিনি জানিয়েছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস তাকে সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিতে বললেও তিনি তা নিচ্ছেন না। কারণ তিনি সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তাই ডরিসের পরিবর্তে মিশেল ডোনেলান সংস্কৃতি বিভাগের দায়িত্ব সামলাবেন।
এছাড়া ওয়েন্ডি মর্টনকে সংসদীয় শৃঙ্খলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্রিটেনে তিনিই প্রথম নারী কনজারভেটিভ চিফ হুইপ হচ্ছেন। সাবেক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মন্ত্রী পেনি মর্ডান্টকে হাউস অব কমন্সের নেতা করা হয়েছে। এই কাজটি সরকারের আইন পার্লামেন্টের মাধ্যমে পাস হওয়া নিশ্চিত করে থাকে।
বিবিসি বলছে, পেনি মর্ডান্ট এবং লিজ ট্রাস টোরি নেতৃত্বে জায়গা করে নেওয়ার জন্য একটি তিক্ত যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। যদিও মর্ডান্ট পরে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে সমর্থন দেন।
এছাড়া লিজ ট্রাসের মন্ত্রিসভায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন কেমি ব্যাডেনোচ, কাজ এবং পেনশন বিভাগের দায়িত্ব নিচ্ছেন ক্লো স্মিথ। একইসঙ্গে কিট মাল্টহাউস নতুন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন।
লিজ ট্রাসের প্রথম দিকের সমর্থক জ্যাকব রিস-মগকে ব্যবসা, জ্বালানি এবং শিল্প কৌশল মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে, সাইমন ক্লার্ক লেভেলিং আপ ডিপার্টমেন্টে এবং অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান পরিবহন বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে জর্জ ইউস্টিসের কাছ থেকে পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব নিচ্ছেন রনিল জয়াবর্ধনে, ব্র্যান্ডন লুইস বিচার মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন এবং নাদিম জাহাউই চ্যান্সেলরের দায়িত্ব ছেড়ে আন্তঃসরকারি সম্পর্ক ও সমতা মন্ত্রী হচ্ছেন।
অবশ্য লিজ ট্রাসের অধীনে যে কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী তাদের পদ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তাদের একজন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস। মূলত ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রশংসা অর্জন করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের নতুন মন্ত্রিসভা আজ বুধবার সকালে প্রথমবারের মতো বৈঠক করবে।
বিবিসি বলছে, ঋষি সুনাকের কোনো সমর্থককে এখন পর্যন্ত বড় কোনো পদ দেওয়া হয়নি। যদিও সুনাকের সমর্থক বলে পরিচিত মাইকেল এলিসকে অ্যাটর্নি জেনারেল হতে বলা হয়েছে।