ক্ষু্দ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার ও সামাজিক অধিকার রক্ষায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। তিনি বলেছেন, মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। একজন মানুষের অধিকার রক্ষায় যদি রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে থাকে, তাহলে সেই ব্যর্থতার দায়ভার রাষ্ট্র পরিচালনা যারা করেন, তাদেরকে নিতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সুলতানা কামাল।
‘সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা হত্যা ও আদিবাসী ভূমি দখলের প্রতিবাদে’ যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে আদিবাসী ফোরাম, এএলআরডি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, কাপেং ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, স্বদেশ, সামস, হেগ ও নাগরিক সমাজ। গত ১৯ আগস্ট মুন্ডা জাতিগোষ্ঠীর নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা দুষ্কৃতকারীদের হামলায় আহত হন। পরদিন তিনি মারা যান।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, ‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মুন্ডাদের পরিবারগুলোকে ঘিরে ধরে এ আক্রমণ করা হয়েছে। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দিলেও তারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ায়নি। কেন অধিকার বঞ্চনার ঘটনা ঘটলে সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চাইতে হয়। একটা সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজে কিসের জন্য দুষ্কৃতকারী ও অন্যায়কারীদের সংবাদ সম্মেলন করে শাস্তি চাইতে হবে।’
সাতক্ষীরার মুন্ডা সম্প্রদায় শুধু নয়, এ হামলার ঘটনার সঙ্গে দেশের যেকোনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বসবাসকারী এলাকার মিল রয়েছে বলে উল্লেখ করেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘যেখানে আদিবাসীরা বাস করে, সেখানে গেলেই একই কাহিনি শুনতে পাই। তাদের সহায়-সম্পত্তি ও জমি দখল করা হচ্ছে। সেটার জন্য হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন করা হচ্ছে এবং এগুলোর কোনো বিচার হচ্ছে না। আমরা এ ধরনের ঘটনাগুলোর বিচার চাই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সঙ্গে মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। এ ঘটনার মূল হোতা রাশিদুল ও এবাদুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ করেন নিহত নরেন্দ্রনাথ মুন্ডার ছেলের স্ত্রী রিনা মুন্ডাও। তিনি বলেন, তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমার সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, মুন্ডাদের অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন-সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আশিক-ই-এলাহী, সদস্যসচিব গোপালচন্দ্র মুন্ডা ও মামলার বাদী ফনিন্দ্রনাথ মুন্ডা বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ৯ দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলোর মধ্যে আছে- নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা হত্যার মূল আসামিদের গ্রেপ্তার ও তদন্ত করে বিচার, তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, মুন্ডাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের জমি ফেরত দেওয়া, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সব দখল হওয়া জমি উদ্ধার, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা। এ ছাড়া সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ভূমি কমিশন ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং জেলা প্রশাসকের বিনা অনুমতিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের দাবিও করা হয়।