শেয়ার দাম কমার সীমা বা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার গুজবে বিদায়ী সপ্তাহের শুরুতে অস্বস্তিতে পড়ে পুঁজিবাজার। তবে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম ঘোষণার পর থেকে অস্বস্তি কাটিয়ে স্বস্তিতে ফিরে দেশের পুঁজিবাজার।
ফলে বেশির ভাগ দিন সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ উভয় বাজারে লেনদেন হয়েছে। সূচক বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের নতুন করে পুঁজি বা মূলধন বেড়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। সূচক বাড়লেও কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও লেনদেন। সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা গেছে।
ডিএসইর তথ্য মতে, বিদায়ী সপ্তাহে (৪ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর) মোট পাঁচ কর্মদিবস লেনদেন হয়েছে। এই পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে দুই দিন দরপতন আর তিন দিন সূচকের উত্থান হয়েছে।
এ পাঁচ দিনের মধ্যে সপ্তাহের প্রথম দিন সূচক কমেছে ১৮ পয়েন্ট। এদিন সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয় প্রথম আড়াই ঘণ্টা। তারপর থেকে হঠাৎ করে বাজার গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে। শুরু হয় সূচক পতন, এতোটাই দরপতন হয় যে, ৭৮ পয়েন্ট সূচক প্লাস (বৃদ্ধি) থেকে ৯৬ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪৮৯ পয়েন্টে নেমে আসে। যা আগের দিনের চেয়ে ১৮ পয়েন্ট কমে।
এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে বিষয়টি ধরা পড়লে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে জানানো হয়, আরোপিত ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাজারে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে বলে একটি চক্র গুজব ছড়িয়েছে, তারা ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রকৃতপক্ষে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইস পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
তারপরও থামেনি দরপতন বরং পর দিন সোমবার আরও বড় দরপতন হয়। এদিন সূচক কমে ৫৮ পয়েন্ট। বাজারের এই অবস্থা থেকে উত্তোলনে বিএসইসির পক্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকার হাউজগুলোকে ফোন দিয়ে জানানো হয় যে, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দেওয়ার জন্য এবং বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি কমানোর জন্য।
তারপর থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করে দেশের পুঁজিবাজার। ফলে পরের তিন দিন মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়।
আলোচিত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ২৬৫টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ৫৪টির।
অধিকাংশ কোম্পানির কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৫৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ৩২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৪১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৭০ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সূচক ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় বিদায়ী সপ্তাহে বাজার মূলধন (পুঁজি) বেড়েছে ৭৭৯ কোটি ৩৫ হাজার ৯৬৫ টাকা। তার আগের সপ্তাহে মূলধন বেড়েছিল ৮ হাজার ৬৪৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭৬ হাজার ৩৫৯ টাকা।
সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ২৬৬ টাকায়। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৬৬৪ কোটি ৩৫ লাখ ৩৪ হাজার ২৩১ টাকায়। মূলধন বেড়েছে দশমিক ১৫ শতাংশ।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৯১ কোটি ২২ লাখ ৬১ হাজার ৬১৬ টাকা। আগের সপ্তাহের লেনদেন হয়েছিল ৯ হাজার ৫১৪ কোটি ৫৪ লাখ ১৩ হাজার ১৬৪ টাকা। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের চেয়ে ৪২৩ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৮ টাকার লেনদেন বেড়েছে। শতাংশের হিসাবে যা ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
একই অবস্থায় লেনদেন হয়েছে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক ১২০ পয়েন্ট বেড়ে ১৯ হাজার ২৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে লেনদেন হয়েছে ১৬০ কোটি ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫৪ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৭৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯০৪ টাকা।
বিদায়ী এই সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৩৪২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের, কমেছে ২৩৬টির আর অপরিবর্তিত ৩৮টির দাম।