সংবাদ প্রকাশের জেরে ঢাকার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। আজ রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন নিয়ে গত মাসে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদের লাভের টাকা কে খায়?’, ‘নিঃস্ব অনেক ব্যবসায়ী, একই দোকান দুইবার বিক্রির পাঁয়তারা’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রচার করে নাগরিক টিভি। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ওই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়।
শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এ বি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন ও মোছলেম উদ্দিন আহমদ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তথ্য অধিকার আইন অনুসরণ না করে কোনো তথ্য–উপাত্ত প্রচার বা প্রকাশ না করা এবং নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।
পরে এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন নিয়ে অতীতে অনেক অনিয়ম ছিল। তিনি কমিটির সভাপতি হওয়ার পর ঘটনা তদন্ত করে নিয়মের মধ্যে এনেছেন। নাগরিক টিভি ওই ভবন নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। কিন্তু তারা প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়, কল্যাণ ট্রাস্ট বা সংসদীয় কমিটি কারও বক্তব্য নেয়নি। এ জন্য কমিটির বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ এবং নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, গণতন্ত্রের প্রতীক হলো জাতীয় সংসদ। সে জায়গা থেকে যখন গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি আসে, তা একই সঙ্গে বিস্ময় ও শঙ্কার। নাগরিক টিভি যে দুটি প্রতিবেদন করেছে, মন্ত্রণালয় বা সংসদীয় কমিটির উচিত ছিল তা তদন্ত করে দেখা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তা না করে উল্টো যারা দুর্নীতির বিষয়টি উন্মোচন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করাটা দুঃখজনক। এটি গণমাধ্যমের মুখ চেপে ধরার চেষ্টা।
সংসদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. সিরাজুল ইসলামের দুর্নীতিসংক্রান্ত সব তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা বন্ধ রাখার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইফতেখারুল ইসলাম খানের বিষয়ে সংসদীয় কমিটির তদন্তে নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ইফতেখারুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাইয়ে সিরাজুল ইসলাম সংসদীয় কমিটিতে একটি চিঠি দিয়ে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান। তিনি চিঠিতে দাবি করেন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (ইফতেখারুল ইসলাম) নির্দেশে সবকিছু হয়েছে। তিনি শুধু ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহিত করেছিলেন। কোনো কাগজে তার স্বাক্ষর নেই।
বৈঠক সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে লালমনিরহাট জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়া ও নামফলক মুছে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ নিয়ে কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করে। এই কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বৈঠকে অভিযোগ করা হয়।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে লালমনিরহাট জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই ভেঙে পড়া ও নামফলক মুছে যাওয়ার কারণ উদ্ঘাটনে জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।