বাংলাদেশের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে সীমান্তে একের পর এক উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। এর অংশ হিসেবে গত তিন সপ্তাহে বেশ কয়েক দফা বাংলাদেশের ভেতরে তারা মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে। এতে নিহত হয়েছে একজন রোহিঙ্গা বালক। এর আগে বান্দরবানের নাক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে স্থল মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন এক বাংলাদেশী যুবক। শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঘুমধুম উপজেলা সীমান্তে সর্বশেষ বিস্ফোরণ হয়। রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতেও সীমান্তে বেশ কয়েকবার উস্কানি দিয়েছিল মিয়ানমার। এখন তারা আবার দেশের ভিতরে মর্টার শেল নিক্ষেপের পাশাপাশি হেলিকপ্টারও ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
মিয়ানমারের সামরিক উসকানির জবাব এখন পর্যন্ত কূটনীতির ভাষাতেই দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতকে এখন পর্যন্ত চার দফা ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। কিন্তু তাতেও নেপিদো নিবৃত্ত না হওয়ায় জাতিসংঘকে জানানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টার্মার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সীমান্তে মিয়ানমারের অব্যাহত সহিংসতার পরও বাংলাদেশ সংযত থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে দেশটির সামরিক তৎপরতার জবাব কূটনৈতিকভাবেই দিতে হবে বাংলাদেশকে। তারা ফাঁদ তৈরির চেষ্টা করলেও দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থেই সংঘাত এড়িয়ে চলতে হবে আমাদের। নেপিদোর ওপর চাপ বাড়াতে চীন-ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা সংকট শুরু থেকে মিয়ানমারের নৃশংসতা ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে মানবিকতা দেখিয়ে আসছে শেখ হাসিনা সরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আইন অনুযায়ী পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের পরিবর্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টার শেল নিক্ষেপ ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে উস্কানি কোনোভাবেই গ্রহণযেগ্য নয়, এধরনের অপতৎপরতা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রে নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি হিসেবেই বিবেচ্য। তাই মিয়ানমারের এই বেআইনি সামরিক তৎপরতা থামাতে বিশ্বকে এখনই কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমাদের আহ্বান, মিয়ানমারের কাছে কঠোর কূটনৈতিক বার্তা পাঠান এবং সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। এমনকি এই ইস্যুটি জাতিসংঘ পর্যন্ত তুলুন। একই সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে আর্থিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন।
লেখক: সিনিয়র সাব-এডিটর, মত ও পথ।