ফিফা র্যাংকিংয়েও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে নেপাল। দুই দলের অতীত পরিসংখ্যানও পালে হাওয়া দিচ্ছিল নেপালের পক্ষেই। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে বাজিমাত করলো বাংলার বাঘিনীরাই। হিসাবের গণেশ উল্টে দিয়ে হিমালয় জয় করলো সাবিনা খাতুনের দল। স্বাগতিকদের ৩-১ গোলে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে সাফের মুকুট জিতে নিলো তারা। এমন দুর্দান্ত জয়ে বহুদিন পর উল্লাসে ভাসলেন দেশের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীরা। তবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পূর্বে সাবিনা খাতুনদের প্রথম লড়াইটা তো জিততে হয়েছে মাঠের বাইরে। মূলত ফিফার বাধ্যবাধকতা মানতেই পনেরো–ষোলো বছর আগে বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবল যাত্রার শুরু। শুরুতে বাংলাদেশের মেয়েদের জয় করতে হয়েছে তীব্র সামাজিক বাধা। মেয়েরা শর্টস পরে ফুটবল খেলবে—এটা মেনে নিতেই সমস্যা হচ্ছিল সমাজের রক্ষণশীল একটা অংশের। সেই আপত্তি কখনো প্রকাশিত হয়েছে মিছিলে, কখনোবা হামলা চালিয়ে ম্যাচ পণ্ড করে দেওয়ার মাধ্যমেও।
বাংলার মেয়েরা কী ধরনের প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে এই অবস্থানে এসেছে সেটি ফুটে উঠেছে ফাইনালের আগে বাংলাদেশ দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা আক্তারে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে। যার একটি অংশ পড়তে পড়তে চোখ ভিজে যায়, ‘যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থণের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনী কে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই। পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে। আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবো।’
সানজিদারা কথা রেখেছেন, শেষ পর্যন্ত লড়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন। রঙিন করে দিয়েছেন সাফল্যবুভুক্ষু বাংলাদেশ নারী ফুটবলকে। তাই অভিনন্দন তাদেরই প্রাপ্য। অভিনন্দন বাংলাদেশ!