রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রশ্নে ইউক্রেনের রুশ-নিয়ন্ত্রিত চারটি অঞ্চলের মস্কো-সমর্থিত কর্মকর্তারা নিজস্ব কায়দায় গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। গণভোট আয়োজনকে রাশিয়ারই উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ক্রেমলিন এ গণভোটে সমর্থন দিয়েছে। রাশিয়া এখন কেন এ গণভোট ডাকল, তা বিশ্লেষণ করেছেন বিবিসির পল কারবি।
যে চারটি অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে, সেগুলো হলো লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া। রাশিয়ার এ গণভোট আয়োজনের উদ্যোগে ক্রিমিয়া দখলের প্রতিধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ক্রিমিয়া দখল থেকে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ, চারটি অঞ্চলই যুদ্ধে লিপ্ত। অন্যদিকে কোনো গুলি না ছুড়েই ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করেছিল রাশিয়া।
প্রায় সাত মাস ধরে ইউক্রেন–রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধের এখন যে পরিস্থিতি, তাতে চাপের মধ্যে আছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। তারা ইউক্রেনের অনেক এলাকা দখল করে নেয়। কিন্তু এখন ইউক্রেন পাল্টা হামলা চালিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে।
ইউক্রেনীয় সেনাদের এ সাফল্যে নিজ দেশে কট্টরপন্থীদের দিক থেকে সমালোচনার মুখে রয়েছেন পুতিন। এ অবস্থায় তিনি ইউক্রেনের দখলকৃত চারটি অঞ্চলে ক্রিমিয়া-কায়দায় অনুষ্ঠেয় গণভোটে সমর্থন দিয়ে সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন।
রাশিয়ার গণমাধ্যমে এ গণভোট নিয়ে জনমত জরিপ প্রকাশ করা হচ্ছে। জরিপগুলোয় দেখানো হচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। তবে জরিপের এমন দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, যুদ্ধের মধ্যেই চার অঞ্চলে গণভোট হবে। তা ছাড়া এ গণভোটের বৈধতা নেই।
২০১৪ সালে ক্রিমিয়ায় এমন গণভোট হয়েছিল। ওই গণভোটের ফল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যাখ্যান করেছিল। ঠিক একইভাবে এখন যে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে, পশ্চিমারা এর নিন্দা জানাচ্ছে। তারা এ গণভোটকে ‘ভুয়া’ বলে অভিহিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন ভাবতে পারেন, দখলকৃত এলাকাগুলোকে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করা হলে যুদ্ধের গতিপথ বদলাতে পারে। কারণ, তেমনটা হলে তিনি ইউক্রেনের পশ্চিমা-সমর্থকদের কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে বলতে পারবেন। কেননা, বিশেষ করে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা রুশ বাহিনীকে চলমান যুদ্ধে খুব ভোগাচ্ছে।
রুশ বিশ্লেষক আলেকজান্ডার বাউনভ বলেন, মস্কো মনে করছে, গণভোট হতে যাওয়া ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো রাশিয়ার ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হলে সেখানে যুদ্ধ করার ভাবনা থেকে পশ্চিমারা বিরত থাকবে। ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে গণভোট শুরু হবে ২৩ সেপ্টেম্বর, চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
ইউক্রেনের অঞ্চল চারটি আংশিক বা প্রায় সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ার দখলে রয়েছে। এখন এসব অঞ্চলে নিজস্ব কায়দায় গণভোট হবে। সশরীর বা দূরবর্তী স্থান থেকে ভোট দেওয়া যাবে। গণভোট হবে অঞ্চলগুলোর রাশিয়ান ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার বিষয়ে। রুশ-সমর্থিত খেরসন অঞ্চলের প্রধান ভ্লাদিমির সালদো বলেছেন, রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তি তার অঞ্চলকে সুরক্ষিত করবে। ঐতিহাসিক ন্যায়বিচার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
কিন্তু অঞ্চলটির রাজধানী খেরসন শহর এখন নিরাপদ নয়। সেখানে রুশ সেনারা ইউক্রেনের পাল্টা হামলা ঠেকাতে ব্যতিব্যস্ত। গত সপ্তাহে সেখানকার কেন্দ্রীয় প্রশাসন ভবনে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এমন একটি পরিবেশে একটি নিরাপদ গণভোট অসম্ভব।