মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনাকালে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি গাড়ি ‘ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস’ (আইইডি) বিস্ফোরণের শিকার হয়েছে। এতে ৩ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় টহল কমান্ডার মেজর আশরাফুল হক আহত হন। আজ মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১টা ৩৫ মিনিটে (সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩৫ মিনিট) এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের সৈনিক জসিম উদ্দিন (৩১), নিলফামারীর ডিমলার সৈনিক জাহাংগীর আলম (২৬) এবং সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সৈনিক শরিফ হোসেন (২৬)। আইএসপিআর জানায়, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের পশ্চিম সেক্টরে বোয়ার এলাকায় মোতায়েন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন (ব্যানব্যাট-৮) গত বছরের ৯ নভেম্বর থেকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। দুর্গম এলাকায় মোতায়েন অন্যতম অস্থায়ী ক্যাম্প কুই থেকে পরিচালিত যান্ত্রিক টহলের একটি দল মেজর আশরাফের নেতৃত্বে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কাইতা এলাকায় টহলে যায়।
বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৩৫ মিনিটে প্রত্যাবর্তন পথে টহল কমান্ডার মেজর আশরাফকে বহনকারী প্রথম গাড়িটি মাটিতে পুতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে পতিত হয়। এতে গাড়িটি প্রায় ১৫ ফুট দূরত্বে ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সৈনিক শরিফ, সৈনিক জাহাংগীর ও সৈনিক জসিম মারাত্মকভাবে আহত হন।
আইএসপিআর জানায়, ঘটনার পরপরই আহত শান্তিরক্ষীদের জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য দুর্গম এলাকা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং ঘন অন্ধকারের মধ্যে উদ্ধার তৎপরতার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। মিশন সদর, জাতিসংঘ সদর এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুততার সঙ্গে ১৪৪ কিমি. দূরে বোয়ারে মিনুসকা হাসপাতালে নিয়ে এলে স্থানীয় সময় ৬টা ৩০ থেকে ৭টা ৫ মিনিটের দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
আইএসপিআর জানায়, এ ঘটনায় আহত শান্তিরক্ষী মেজর মো. আশরাফুল হক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়োজিত অন্যান্য শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে আছেন। শাহাদতবরণকারী সেনাসদস্যদের মৃতদেহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা আফ্রিকার ৮টি দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে চলেছেন। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।