তদবির ও জালিয়াতির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৯ শিক্ষকের এমপিও পাওয়ার তথ্য ফাঁস হয়েছে। ২০০০ সালের মে মাস থেকে ২০১৮ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত ওই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. সাহারা খানম।
ওই ১৯ শিক্ষকের ২০০০ সালের মে থেকে ২০১৮ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত বেতনের হিসাব বিবরণী পাঠাতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপকের কাছে চিঠি দেন উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. সাহারা খানম।
চিঠিতে বলা হয়, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৯ জন শিক্ষক জালিয়াতি করে ২০০০ সালের মে মাস থেকে আজ পর্যন্ত (১৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সরকারি অংশের বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। সব টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার লক্ষ্যে তাদের উত্তোলিত টাকার হিসাব বিবরণী প্রয়োজন। এ অবস্থায় মে-২০০০ থেকে জুন-২০১৮ পর্যন্ত শিক্ষকদের হিসাব বিবরণী দেওয়ার অনুরোধ করা হলো।
এই ১৯ জন সহকারী শিক্ষক হলেন, আব্দুল খালেক, মিনহাজুর রহমান, আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ গোলজার হোসেন, মো. জহিরুল ইসলাম, আফরোজা খাতুন, মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান মিয়া, মো. মনজুরুল হক মজুমদার, আবুল কালাম, মো. শহীদ উল্লাহ, শামীমা আফরোজ, হনুফা বেগম, মো. নুর উদ্দিন, সুভাষ চন্দ্র মিত্র, মুহম্মদ লুৎফর রহমান, মেহেরুন নেছা খানম, পারভীন আক্তার, মোহাম্মদ জিয়াদুল হক, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক জিন্নাতুন্নেছা।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ অনেক। মাঠ পর্যায়ে লোকবল কম থাকায় অনেক সময় অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দেরি হচ্ছে। তবে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একজন অভিভাবকের অভিযোগের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ৫ এপ্রিল তদন্ত করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেন। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে গত ২০ জুনের চিঠিতে ১৯ জন প্রাথমিক শাখা শিক্ষকের এমপিও বাতিল করে এ পর্যন্ত আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দেওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগ সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত করে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয় ঢাকার আঞ্চলিক উপ-পরিচালককে।
তদন্তের পর অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপকের কাছে ১৯ শিক্ষকের ২০০০ সালের মে মাস থেকে ২০১৮ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত বেতনের হিসাব বিবরণী পাঠাতে ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. সাহারা খানম চিঠি দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় জুনিয়র শিক্ষকের পদ বিলুপ্ত করা হয়। উত্তরা হাইস্কুলে ১৯৯৭, ১৯৯৮ ও ২০০০ সালে ১৬তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা পরিপন্থি। জুনিয়র শিক্ষকরা ২০০০ সালে দশম গ্রেডে এমপিওভুক্ত হন এবং ২০১২ সালে উচ্চ নবম গ্রেড পান। ২০ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন শিক্ষক মারা গেছেন। অবশিষ্ট ১৯ জন শিক্ষকের এমপিও বাতিল এবং উত্তোলিত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে জালিয়াতির মাধ্যমে জুনিয়র শিক্ষকদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত করা হয়। উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান মোল্লা সরাসরি এর সঙ্গে যুক্ত। প্রায় ২২ বছর ধরে জালিয়াতির বিষয়টি গোপন রাখেন তিনি।
হাফিজুর রহমান মোল্লার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠানের বাইরে আছি। এ বিষয়ে এখন কিছু বলবো না। আমি ঢাকায় নেই। কিছু জানার থাকলে দুদিন পরে আসেন।’