আদর্শ মানুষ ও আদর্শ সাংবাদিক বলতে যা বোঝায়, তা–ই ছিলেন সদ্য প্রয়াত বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খান। আর সাংবাদিকদের যে কোনো সংকটে স্বাধীন কণ্ঠস্বর ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। আর কে জি মোস্তফার মতো মানুষ বেঁচে থাকবেন ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো’র মতো কালজয়ী গানের জন্য।
এভাবেই নানা স্মৃতিকথায় গত এক বছরে প্রয়াত ১৬ সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সদস্যকে স্মরণ করল জাতীয় প্রেসক্লাব। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই ১৬ সদস্যের স্মরণে স্মৃতিসভার আয়োজন করে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ। সেখানেই প্রয়াত এসব সাংবাদিকের সম্পর্কে নানা স্মৃতিচারণামূলক বক্তৃতা করেন সাংবাদিক ও প্রয়াত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন প্রয়াত সাংবাদিকদের কথা বলতে গিয়ে বলেন, তারা প্রত্যেকে সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাদের চলে যাওয়ায় সাংবাদিকতার জগৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জাতীয় প্রেসক্লাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, সদ্য প্রয়াত তোয়াব খান সাংবাদিকতায় নতুন পথনকশা তৈরি করেছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এক একটা মানুষ থাকেন, যাদের জীবনযাপনই ক্রমে একটা আদর্শে পরিণত হয়। এক একজন থাকেন যারা এমনভাবে বাঁচেন যে ব্যক্তিকে অতিক্রম করে, তাঁদের সেই বাঁচা একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। এমনই একজন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ।
বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খানকে দেশের সাংবাদিকতা পেশার অনন্য দিকপাল হিসেবে অবহিত করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। আর রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে তিনি বলেন, মত-পথের পার্থক্য থাকলেও তিনি ছিলেন বিভাজনের ঊর্ধ্বে। তিনি সব সময় অন্যদের কথা শোনার চেষ্টা করতেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তোয়াব খানের অবদান সব সময় থেকে যাবে। তিনি অনুসরণযোগ্য ছিলেন। আর বর্তমান সময়ে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মতো সাংবাদিক নেতার বড় প্রয়োজন ছিল।
দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ওয়ায়দুল কবির জনকণ্ঠের সাবেক উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, আদর্শ মানুষ, আদর্শ সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী বলতে যা বোঝায়, তা–ই ছিলেন তোয়াব খান।
দৈনিক বাংলার প্রয়াত সম্পাদক তোয়াব খান সম্পর্কে বলতে গিয়ে দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শরিফুজ্জামান বলেন, তোয়াব খান ছিলেন সম্পাদকদেরও সম্পাদক।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, ‘জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর লগ্নে আমাদের যে সাথিরা এখন অবর্তমানে, আমরা মনে করি, তাদের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা, আদর্শ ও অবদান আমাদের সঙ্গে সব সময় রয়েছে। সেই উজ্জ্বল স্মৃতির পাথেয় সম্বল করে আমরা সামনে এগিয়ে যাব।’
স্মৃতিসভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক আবু তাহের, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বাদল, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মাইনুল আলম, আশরাফ আলী, সদস্য আইয়ুব ভূঁইয়া প্রমুখ। স্মৃতিসভার শুরুতে প্রয়াত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
স্মৃতিসভায় প্রয়াত সাংবাদিক সাগর বিশ্বাসের স্ত্রী প্রতিমাময়ী বিশ্বাস, পীর হাবিবুর রহমানের পুত্র ফাহিম অন্তর, রাজা সিরাজের পুত্র সোহাগ আহমেদসহ কয়েকজন প্রয়াত সাংবাদিকের স্বজন স্মৃতিচারণা করেন ও দোয়া চেয়ে বক্তব্য দেন।
তোয়াব খান, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ও গীতিকার কে জি মোস্তফা ছাড়াও প্রয়াত এই সাংবাদিকেরা হলেন এস এম শওকত হোসেন, রাজা সিরাজ, মো. শামীম মাশরেকী, সৈয়দ আকরাম, খন্দকার আনিছুর রহমান, পীর হাবিবুর রহমান, শামসুল আলম বেলাল, সাগর বিশ্বাস, এ এম মুফাজ্জল, এইচ এম জালাল আহমেদ, আবুল বাশার নুরু, শফিকুল ইসলাম ইউনূস ও গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।