বিরোধী দলকে খুশি করতে সিইসি নির্বাচন স্থগিত করেছেন: আ.লীগ প্রার্থী

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

বিরোধী দলকে খুশি করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপন।

গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা অভিযোগ করেন।

বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকাল ৫টার দিকে সাঘাটা উপজেলা আ.লীগের দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে জেলা ও উপজেলার আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তের পরপর ফুলছড়ি-সাঘাটার আ.লীগের নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে রিপন লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সকল প্রার্থী তাদের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছিল। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, কোনো সংঘর্ষ-সংঘাত হয়নি। অথচ বাস্ততসম্মত কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। যা সাধারণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তার পরেও আমরা নির্বাচন কমিশনের একতরফা সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচনের মাঠে সুশৃংখলভাবে চলছিলাম। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে দুপুরের পর নির্বাচন কমিশন পুরো নির্বাচন স্থগিত করে। যা সাধারণ জনগণ ও ভোটারদেরকে হতবাক করেছে। আমি নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনকে আহবান জানিয়ে রিপন বলেন, যে সকল কেন্দ্রে সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে অবিলম্বে সেই সকল ভোট কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা এবং যে সকল কেন্দ্রে ভোট স্থগিত রাখা হয়েছিল সে সকল কেন্দ্রে পূনরায় ভোট গ্রহণ করা হোক।

এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে কেন্দ্র দখলসহ নানা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। জালিয়াতির মাধ্যমে গোপন কক্ষে একজনের পরিবর্তে আরেকজন ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথমে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি উচ্চ বিদ্যালয় ও রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়সহ তিনটি ভোট কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেন। এরপর কয়েক দফায় মোট ৫১টি কেন্দ্রের ভোট একই অভিযোগে স্থগিত করেন নির্বাচন কমিশন।

এদিকে একই দিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র দখল, অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়াসহ ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার অভিযোগে সাঘাটা উপজেলার বগারভিটা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে জাতীয়পার্টিসহ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তাদের ভোট বর্জনের ঘোষণার বিষয়টি স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদের ফেসবুক আইডি ‘নিশাদ ভাইয়ের সমর্থক গোষ্ঠী’ থেকেও লাইভে প্রচার করা হয়।

তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নিজেরাই তাদের অফিস ভাঙচুর করে আমাদের নামে মামলা দিয়েছেন। আমাদের লোকদের গ্রেপ্তার করিয়েছেন। বিষয়গুলো আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে লিখিত, মৌখিক ও ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েও ইতোপূর্বে কেনো প্রতিকার পাইনি। এছাড়া আজকে আমাদের একটা ভরসা ছিল যে, ভোটটা ইভিএমে হচ্ছে। কিন্তু এটা একটা শুভঙ্করের ফাঁকি। আমাদের এজেন্টদের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটাররা গেলে ভোটারদের ফিঙ্গার নেওয়া হলে তারা তাদের ইচ্ছেমতো নৌকা প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন। সুতরাং এই ভোট করার কোনো মানে হয় না। এছাড়াও নির্বাচনে নৌকা মার্কা কারচুপি করছেন। কেন্দ্র দখল করে গোপন কক্ষে গিয়ে তারা ভোট মেরে নিয়েছেন।

তারা বলেন, অনিয়মের অভিযোগে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ৫১ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করেছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে নির্বাচন স্বচ্ছ হয়নি। তাই সবার সম্মতিক্রমে আমরা ভোট বর্জন করছি। তারা দাবি করে বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বাতিল করে সুষ্ঠু পরিবেশে নতুন করে ভোট আয়োজন করা হোক।

উল্লেখ্য, এই আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার গত ২২ জুলাই মৃত্যুর পর ২৪ জুলাই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। নিয়ম অনুযায়ী কোনো আসন শূন্য ঘোষণা করা হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী ১২ অক্টোবর বুধবার এই আসনের ১৪৫টি কেন্দ্রে সকাল ৮টায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল। শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণসহ ভোটের মাঠে সহিংসতা এড়াতে ১ হাজার ২৪২টি সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল সবগুলো ভোট কেন্দ্রই। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন আ.লীগ মনোনীত মাহমুদ হাসান রিপন, জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রনজু (লাঙল), বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম (কুলা), স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান (ট্রাক)।

শেয়ার করুন