সিত্রাংয়ের আঘাতে বিদ্যুৎ খাতে ২২ কোটি টাকার ক্ষতি

ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এক কোটির বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন সোমবার। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ফিরে পেয়েছেন ৬০ লাখের বেশি গ্রাহক। আর বাকি ৪০ লাখ এখনো বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন। তবে দ্রুত বাড়ছে বিদ্যুৎ ফিরে পাওয়ার এলাকা। আজ রাতের মধ্যেই অধিকাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ ফিরে পেতে পারেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তাঁরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে সিত্রাংয়ের কারণে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ২২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ক্ষতি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি)। সব গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ ফিরিয়ে দিতে দেশের সবচেয়ে বড় এ বিতরণ সংস্থার ৩ হাজার ৩২৬টি দল মাঠে কাজ করছে।

আরইবি সূত্র বলছে, ১ হাজার ৪টি খুঁটি (বিদ্যুৎ সরবরাহের পোল) ভেঙে গেছে। নতুন খুঁটি বসানো হচ্ছে। ৯ হাজার ২১২টি স্পটে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। ৭ হাজার ১২৭টি মিটার ভেঙেছে। সব মিলে তাদের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১২ কোটি টাকা।

ঝড়ের প্রভাবে গতকাল আরইবির ৮০টি সমিতির মধ্যে ৪০টির অধিকাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিলেন। এসব এলাকায় ছোট-বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে ৩ কোটি ৩৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৮৯ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মেহেরপুর জেলায় পুরোপুরি বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে। বাকি ৩০টি জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরেছে। আর বাকি এলাকায় ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ ফিরছে। ভোর হওয়ার আগেই সবাই বিদ্যুৎ ফিরে পাবেন বলে আশা করছে আরইবি। এর মধ্যে বিকেল পাঁচটায় বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন ছিলেন ৫৫ লাখ গ্রাহক। রাত ৭টায় এটি কমে দাঁড়ায় ৪০ লাখে।

আরইবির সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আমজাদ হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনতে প্রতিটি সমিতির আওতায় গড়ে ৮০টি দল মাঠে কাজ করছে। কিছু দুর্গম এলাকা ছাড়া অধিকাংশ এলাকায় আজ দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২টার মধ্যে মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হবে।

আরইবি সূত্র বলছে, এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন ১ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক। আর্থিক ক্ষতিও হয়েছিল এর চেয়ে চার গুণ। সব গ্রাহকের বিদ্যুৎ ফিরিয়ে দিতে প্রায় চার দিন লেগেছিল ওই সময়।

খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের শহর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। খুলনা, পটুয়াখালী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ফরিদপুর এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে ওজোপাডিকোর। তাদের বিদ্যুতের খুঁটি নতুন করে বসাতে হচ্ছে ৮৯টি, হেলে পড়া খুঁটি সোজা করতে হচ্ছে ৬১১টি, ১৪৬ কিলোমিটার লাইনের তার পুনঃস্থাপন করতে হচ্ছে। এগুলো করতে তাদের সোয়া চার কোটি টাকা খরচ হবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, তিনটি পৌর এলাকা ছাড়া বাকি সবখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, তারা সারা দেশের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করছে। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৭ কোটি টাকার ক্ষতির হিসাব পেয়েছে তারা। পিডিবির ৪টি বিতরণ অঞ্চলের মধ্যে কুমিল্লা অঞ্চলে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, সিলেটে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, ময়মনসিংহে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৯৭ লাখ ৪২ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির মধ্যে বাকি তিনটির তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এর মধ্যে দুটি ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। সেগুলো হলো ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। ঢাকার কিছু এলাকায় গাছ পড়ে তার ছিঁড়লেও তা সোমবার রাতেই আবার মেরামত করা হয়েছে। আর অন্যটি হচ্ছে উত্তরবঙ্গের শহর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি (নেসকো)। দেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কোনো ক্ষতি হয়নি।

শেয়ার করুন