যারা খুন, অগ্নিসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িত, তাদের ছাড় নেই: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হওয়ায় বিএনপি আন্দোলন করতে পারছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপির যারা খুন, অগ্নিসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে ধরতে হবে। তাদের কোনো ছাড় নেই। আজ শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দেওয়া প্রারম্ভিক ভাষণে এসব কথা বলেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর মানুষের আস্থা রয়েছে বলেই তিনবার ভোট দিয়ে দলকে নির্বাচিত করেছে, এবারও দেবে। যারা সন্ত্রাসী, খুনি, জনগণের অর্থ লুটপাটকারী, বোমা-গ্রেনেড হামলাকারী ও অর্থ পাচারকারী; জনগণ তাদেরকে ভোট দেবে না। বৈশ্বিক সংকটের কারণে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতায় ব্যয় কমাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আয়োজন হবে সাদামাটা।

universel cardiac hospital

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, কাজ করে যাব। আমাদের উন্নয়নের কথাগুলো যেমন মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে; ঠিক তেমন ভবিষ্যতের জন্য যে পরিকল্পনা করছি, সেটাও মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। দলের আগামী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও কতোগুলো উপকমিটি করতে হবে।

বিএনপি তার আমলে লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, গ্রেনেড হামলা, অত্যাচার, নির্যাতন, খুন-রাহাজানি এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা করেনি বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে এসেছে, সেই দেশকে তারা ভিখারির দেশে পরিণত করে; হাত পেতে চলার দেশে পরিণত করে। সেখান থেকে বাংলাদেশকে তুলে আজকে আমরা আত্মমর্যাদাশীল দেশে পরিণতি করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের সভায় একের পর এক বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালানো হলেও বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে সক্ষম হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, কামরান ও শেখ হেলালের বৈঠকে গ্রেনেড ও বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে এবং মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজসহ অনেককে হত্যা করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, সারাদেশে এমন কোনো উপজেলা ও জেলা নেই, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়নি। তারা আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে হত্যা করে দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হচ্ছে এবং জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের ‘অমানবিক নির্যাতনের’ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপির নির্মম নির্যাতনের কথা ভুলে গেলে চলবে না। তারা বারবার প্রকাশ্যে এটি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ৬৪টির মধ্যে ৬৩টি জেলায় সুসংগঠিত উপায়ে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। তাদের শাসনামলে বাংলাদেশে পুলিশি পাহারায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা মিছিল বের করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি রাতে বোমা বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ও এরশাদ সরকার যতোটা সময় ক্ষমতায় ছিল, তারা নির্যাতন, হত্যা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে লিপ্ত ছিল।

যারা খুন, অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, তারা অনেকে লুকিয়ে ছিল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এখন বিএনপি মাঠে নেমেছে, তারাও মাঠে নামবে। এসব আসামিকে ধরতে হবে। তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। কারণ, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছে। আইন তার আপন গতিতে চলবে।

আওয়ামী লীগকে এ উপমহাদেশের পুরোনো সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই সংগঠন আরও শক্তিশালী হোক। মানুষের জন্য কাজ করে তাদের হৃদয় জয় করে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। জনগণের ভোটে, জনগণের আস্থা নিয়ে এসেছি। সেই আস্থা আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ আরও বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এটা আমাদের মাথায় রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। যারা সন্ত্রাসী, খুনি, ১০ ট্রাক অস্ত্র, গ্রেনেড হামলাকারী, বোমা হামলাকারী—তাদেরকে দেশের জনগণ বিশ্বাস করে না। জনগণ তাদের পাশে কোনোদিন থাকবে না। এটাই হলো বাস্তবতা।

শেয়ার করুন