ভারতের গুজরাট রাজ্যের মরবিতে ঝুলন্ত সেতু দুর্ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। গত রোববার সন্ধ্যায় সেতুটি হঠাৎ ভেঙে পড়ে। এ সময় সেতুতে আনুমানিক ৫০০ মানুষ ছিলেন। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ১৩৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি। মরবির এ ঘটনাকে ভারতের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডিগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
১৩৭ বছরের পুরোনো সেতুটি মেরামতের পর গত ২৬ অক্টোবর সর্বসাধারণের জন্য আবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। তাহলে ঠিক কী হলো, কী কারণে সেতুটি ভেঙে পড়ল? ট্র্যাজেডির সুলুক সন্ধানে দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, উদ্ধারকাজে প্রথম সাড়া দেওয়া লোকজন, স্থানীয় সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি।
দুর্ঘটনার জন্য স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকেরা সেতুটি পরিচালনাকারী সংস্থাকে দোষারোপ করছেন। ব্যর্থতার জন্য পুলিশ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকেও অভিযুক্ত করা হচ্ছে। অনেকে এখন প্রশ্ন করছেন, এত বড় ট্র্যাজেডি কীভাবে ঘটল, কেন তা প্রতিরোধ করা যায়নি?
সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ২০০৮ সাল থেকে চুক্তিবদ্ধ ওরেভা গ্রুপ। ফার্মটির মালিক জয়সুখ ভাই প্যাটেল সেতুটি আবার চালুর একদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এর সংস্কারকাজে দুই কোটি রুপি খরচ হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, জয়সুখ আরও বলেছিলেন, আগামী ৮ থেকে ১০ বছরে সেতুটির কিছুই হবে না। যদি সেতুটি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ১৫ বছরের মধ্যে কোনো মেরামতের প্রয়োজন হবে না। সেতুটির মেরামত কাজের গুণমান, যন্ত্রপাতি ও ফার্মটি যে ঠিকাদার নিয়োগ করেছিল, তারও প্রশংসা করেছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনার পর ওরেভার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৯ ব্যক্তি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুজন ব্যবস্থাপক, দুজন টিকিট বিক্রেতা, দুজন ঠিকাদার ও তিনজন নিরাপত্তারক্ষী। অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওরেভার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিবিসি।
কোম্পানিটির একজন মুখপাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, সেতুটির মাঝামাঝি অংশে অনেক বেশি লোক ছিল। কেউ কেউ সেতুটিকে দোলানের চেষ্টা করছিল। সেতুটি পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে ব্যর্থ হওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগও ওরেভার বিরুদ্ধে উঠেছে।
স্থানীয় পৌরসভার প্রধান সন্দীপ সিংহ জালা সাংবাদিকদের বলেন, সেতুটি পুনরায় চালুর আগে ওরেভাকে নিরাপত্তাসংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তবে ঘড়ি তৈরির জন্য পরিচিত একটি কোম্পানিকে (ওরেভা) কেন সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন।