রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধীদের দমন জরুরি

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

রোহিঙ্গা ক্যাম্প
রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ফাইল ছবি

দিন দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছেই। রোহিঙ্গারা খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১০-১৫টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয়। আর সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে প্রতিহত করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা। গত পাঁচ বছরে ১০১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মে মাসে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজারে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ২৭৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা ১০৯ জন। নিহত রোহিঙ্গাদের মধ্যে তিনজন নারীও ছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প অপরাধ জগতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। আর মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ ব্যবসা নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ তো চরম আকার ধারণ করেছে। প্রায় প্রতি রাতেই ক্যাম্পগুলোতে গুলির শব্দ শোনা যায়।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হাতে হাতে পৌঁছে গেছে অস্ত্র। অস্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে তারা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে ডাকাতি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ করতে স্থানীয় অস্ত্র কারবারিদের সম্পৃক্ততায় পাহাড়ের গহিন অরণ্যে স্থাপন করা হয়েছে অস্ত্র তৈরির কারখানা। এছাড়াও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থ-সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর।

এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে রাখা কঠিন কাজ হলেও সব বিবেচনা করে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। তা না হলে আরো অপরাধ বাড়তে পারে। যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বটে। এমন বাস্তবতায় আমাদের প্রত্যাশা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব ধরনের অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও অনেক বেশি দক্ষতার পরিচয় দেবে। অবশ্য সেইসঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়াতে হবে।

লেখক : সংসদ সদস্য,
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা,
সম্পাদক, মত ও পথ।

শেয়ার করুন