‘বৈদেশিক সহায়তা কমছে, বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার (ওডিএ) পরিমাণ দিন দিন কমছে। সহজ শর্তের ঋণের বদলে এখন দাতাগোষ্ঠীগুলো কঠিন শর্ত আরোপ করছে। বাংলাদেশের সামনে আরও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে সহায়তা পাওয়া কঠিন হবে। তাই এখন থেকেই অবকাঠামো নির্মাণ ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে হবে।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ বুধবার ‘বঙ্গোপসাগর সংলাপ-২০২২ (বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন)’-এর সমাপনী দিনের একটি অধিবেশনে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) তিনদিনের এই সংলাপের আয়োজন করে।

universel cardiac hospital

নামমাত্র বা সহজ শর্তের ঋণগুলো অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স বা বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) হিসেবে পরিচিত। দাতাগোষ্ঠীর এ সহায়তা দিয়ে দক্ষিণ এশিয়াতে বড় বড় অবকাঠামো গড়ে উঠছে, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তারপরও মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো পিছিয়ে। ওডিএর ধরন, ব্যবহারের কৌশল, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয় বঙ্গোপসাগর সংলাপে।

ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে শেষ ৫ বছরে বাংলাদেশ প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ওডিএ পেয়েছে, যা বাংলাদেশের পাওয়া মোট বৈদেশিক সহায়তার ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে। ইইউতে বাংলাদেশে ৩ বছর অতিরিক্ত সময় পাবে। পোশাক খাতের পাশাপাশি ওষুধ, চামড়া, পাটজাত পণ্যের মতো খাতগুলোয় রপ্তানি বাড়াতে জোর দিতে হবে।

দেশে প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, অবকাঠামো ও মানব উন্নয়নের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়াতে বিনিয়োগ করতে হবে। যে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেগুলো জনগণের মঙ্গলের জন্য, নাকি অন্যদের পকেট ভরতে, তা দেখতে হবে। উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।

করোনার আগে থেকেই দেশে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ কমছে বলে জানান ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ওডিএর পরিমাণ বাড়বে, তা বলা যাচ্ছে না। ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধে সময় বাড়াতে কূটনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কোনো দেশের সঙ্গে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার আগে নিজ দেশের ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কথা ভাবতে হবে।

জাপানের রাকুতেন সিকিউরিটিজ ইকোনমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো ইয়োশিকাজু কাতো বলেন, করোনা মহামারির পরেও বাংলাদেশে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। জাপানের ৩২৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া, দারিদ্র্য দূর করা ও টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে জাপান।

অধিবেশনের আলোচনায় বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে ২০২৬ সালের নভেম্বরে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। এ ঘটনা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ এতোদিন বহির্বিশ্ব থেকে যেসব শুল্ক সুবিধা পেয়ে আসছিল, ২০২৬ সালের পর সেগুলো থাকবে না।

অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসী। তিনদিনের এ সংলাপে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তারা অংশ নেননি। তবে আজ কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। তিনি মঞ্চে ওঠেননি। কিছুক্ষণ থেকে তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও দেননি।

শেয়ার করুন