দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের অবসান হয় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর। পাহাড়ের দল জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে এ চুক্তি করেছিল সরকার। ২৫ বছর আগের এদিন পাহাড়ের মানুষসহ সবার মধ্যে আশা জাগিয়েছিল। আজ শুক্রবার ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির রজতজয়ন্তী।
দিনটি নিঃসন্দেহে উল্লাস করে, আনন্দ করে নানা আয়োজন পালন করতে পারত চুক্তি সম্পাদনকারী দুই পক্ষই। কিন্তু আজ চুক্তি সম্পাদনকারী জেএসএস দিনটি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ‘চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলনে’ শামিল হওয়ার ডাক দিল। চুক্তির ২৫ বছর পূর্তিতে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে জেএসএস ও আদিবাসী ফোরাম।
অনুষ্ঠানস্থলের মঞ্চের ব্যানারে ছিল এ আন্দোলনের ডাক। জেএসএসের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন দলটির প্রধান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা। তার কণ্ঠেও ছিল কষ্টের সুর।
তিনি বলেন, চুক্তি ছিল আমার কাছে এক পবিত্র দলিল। পাহাড়ের মানুষের পক্ষে আমি চুক্তি করেছিলাম। এরপর আমি প্রতিদিন, প্রতি মাস, প্রতিটি বছর এর সফল বাস্তবায়ন দেখতে চেয়েছি। সরকারকে সহযোগিতা করতে চেয়েছি। আমরা পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর পার হয়ে এসেছি। মনে হয়, সময়টা আমার জীবনের বৃথায় পার করে এলাম।
আজ কথা বলার সময় সন্তু লারমা বারবার ফিরে গেছেন ২৫ বছরের আগের সময়ে। কারণ, দিনটি বিশেষ সময়, ২৫ বছর পূর্তি। আজ সেই সময় এসে তুলে ধরেছেন স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পাহাড়ের মানুষের লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত। মিলনায়তন ভরা দর্শক, গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেছেন চুক্তির নানা দিক।
সন্তু লারমা বলেন, আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে। ফলাফলহীন ছিল এ ২৫ বছর। এটা ছিল অবর্ণনীয় যন্ত্রণার অনুভূতির বিষয়। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন তো হলোই না, বরং এ চুক্তি যেন মানুষ ভুলে যায়, তার ব্যবস্থাই করেছে সরকার ও শাসক গোষ্ঠী।
১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। এরপর এ দফায় টানা প্রায় ১৪ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় দলটি। চুক্তি সম্পাদনকারী দলটির কাছে প্রত্যাশা তাই সংগত কারণেই বেশি, সন্তু লারমার বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে আজ। কিন্তু তার কথা, আশাহীনতা বেশি করে ঘটিয়েছে এ সরকারই।
জেএসএস নেতা সন্তু লারমা বলেন, সরকার আমাদের কথা বলতে দেয়নি। আমাদের সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা পাহাড়ের ও সমতলের আদিবাসীদের নানা সমস্যা নিয়ে দেশে–বিদেশে নানা জায়গায় কথা বলতে চেয়েছিলাম। সরকার সেটাতে বাধা প্রদান করে এসেছে। বাংলাদেশের উপনিবেশ হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাকিস্তান যেভাবে বাংলাদেশকে শোষণ করে এসেছে, তার চেয়ে অধিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে শাসন–শোষণ করে এসেছে এ দেশের শাসকগোষ্ঠী।
চুক্তির ফলে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা। তিনি বলেন, পানছড়িতে (খাগড়াছড়ি জেলার একটি উপজেলা) আমার গ্রামের বাড়ি। গ্রামের বাড়িতে যেতে পারি না, আমি নিজে উদ্বাস্তু।