জাতিসংঘের প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধুর উক্তি ও বিশ্বশান্তি

সম্পাদকীয়

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। ছবি : সংগৃহীত

জাতির পিতা, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব ডায়ালগ অ্যাজ আ গ্যারান্টি অব পিস, ২০২৩’ শিরোনামের প্রস্তাবে সন্নিবেশিত হয়েছে। বিশ্বমানবতা ও শান্তির অন্যতম প্রবক্তা, বিশ্ব নেতৃত্বের মঞ্চে হিমালয়ের মতো উঁচু আসনে থাকা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এ উক্তি প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের প্রস্তাবে সন্নিবেশিত হয় গত মঙ্গলবার। সংস্থাটির সাধারণ পরিষদে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া ঐতিহাসিক প্রথম ভাষণে তিনি যে বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, সেগুলোর ধারণামূলক ভিত্তি থেকে প্রস্তাবনা তৈরি।

প্রায় গোটা পৃথিবীতে অতিমারি আকারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা ও রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙ্গ সভায় ওই প্রস্তাব উত্থাপন করে তুর্কমেনিস্তান। প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ৭০টি দেশ প্রস্তাবটি সমর্থন করে। এতে বলা হয়, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, নিরক্ষরতা, বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্ব স্বীকার করে এবং গঠনমূলক সহযোগিতা, সংলাপ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার চেতনায় ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’–এর প্রতি জোর দেওয়া হলে, তা উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে সহায়তা করবে। রাষ্ট্রপিতা, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের অগ্রদূত বঙ্গবন্ধুর উক্তি জাতিসংঘে সন্নিবেশিত হওয়া তাঁরই নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক অর্জন।

আমরা উল্লেখ করতে চাই, ‘গণ সূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে’ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার যে অমর কবিতা শুনিয়েছিলেন জাতির পিতা, তিনি অপ্রতিরোধ্য বজ্রকণ্ঠে দ্রোহের যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে, তাঁর সেই ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেসকো ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যুদ্ধ, সামাজিক বিপর্যয় ও সংরক্ষণের অভাবে বিশ্বজুড়ে ঝুঁকিতে থাকা নথিগুলোকে ২৫ বছর ধরে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে ইউনেসকো। এ পর্যন্ত এসব স্বীকৃতির মধ্যে ইউনেসকো প্রথম শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়, যা ছিল অলিখিত।

বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারা ছিল অসাধারণ, অনন্য। তাঁর বিশ্বদীক্ষায় অগ্রাধিকার পায় শান্তি প্রতিষ্ঠা। তাঁর কূটনীতির প্রধান লক্ষ্য শান্তি। তাঁর দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা ও বাঙালি জাতির প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা প্রতিটি কূটনৈতিক ঘটনায় প্রতিফলিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেন ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি। তিনি ইঙ্গিত দেন, দেশের পররাষ্ট্র সম্পর্কের মূলনীতি ও কাঠামো সম্পর্কে। শান্তি, মানবতাবোধ দ্বারা যে পরিচালিত হবে কূটনীতি, বঙ্গবন্ধু তা দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বকে সেদিন জানিয়ে দেন।

বঙ্গবন্ধুর শান্তির প্রশ্নে অবিচল কূটনীতির মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাঁর অনুসৃত কূটনীতির কাঠামো ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তাঁরই তনয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। জাতিসংঘের প্রস্তাবে সন্নিবেশিত বঙ্গবন্ধুর উক্তিটি দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত প্রায় ১৪ বছর ধরে দেশের বৈশ্বিক অবস্থানকে করেছেন শক্তিশালী ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় পররাষ্ট্রনীতিকে করেন গতিশীল।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় আয়োজিত ১৯তম দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালেও প্রধানমন্ত্রীর বলেন, ‘আমরা সবসময় শান্তি চাই। শান্তিতে বিশ্বাস করি। দুর্ভাগ্য, একদিকে করোনা মহামারি, আরেকদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এ পরিস্থিতি মানুষকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।’ আরেকটি বিষয় বলা জরুরি, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, দার্শনিক ও মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নানা বিশ্লেষণ, গবেষণা হলেও তাঁর কূটনৈতিক ভাবনা নিয়ে ততোটা গবেষণা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমরা জোর দাবি জানাই, এ বিষয়ে গবেষণার জন্য।

শেয়ার করুন