ব্যয় সংকোচনে সবচেয়ে বেশি সাশ্রয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে কয়েক মাস আগে ব্যয় সংকোচনের নীতি নিয়েছিল সরকার। গত জুন থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়, জরুরি নয় এমন খরচ কমানোসহ নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কয়েক মাসের হিসাবে ব্যয় সংকোচনে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব কমিটির বৈঠকে এ হিসাব বেরিয়ে এসেছে। বৈঠক শেষে বিকেলে বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদেরকে এসব তথ্য জানান।

universel cardiac hospital

গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সচিব সভার বৈঠক। ওই বৈঠকে বলা হয়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ কয়েকটি কারণে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা সহজেই কাটছে না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের ভিত্তিতে সরকার মনে করছে, সামনের বছর ২০২৩ সাল আরও ‘কঠিন’ হতে পারে।

এমন প্রেক্ষাপটে এখন থেকেই খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রাখা, কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানো, নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখা, ওএমএসসহ এ–জাতীয় কার্যক্রমগুলো স্বাভাবিক রাখা, ব্যয় সংকোচন করাসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সচিব সভার যে বৈঠক হয়, তারই ফলোআপ সভা ছিল আজ। আজকের সভায় সচিবদের কাছ থেকে ব্যয় সংকোচনে বিভিন্ন খাতে সাশ্রয় কেমন হয়েছে, তা জানা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত জুন থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৪৮ শতাংশ খরচ কমেছে। আপ্যায়ন খরচ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েই ৬০ শতাংশের বেশি কমেছে। জ্বালানি তেলেও প্রায় ৪০ শতাংশ কম খরচ হয়েছে।

সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন সর্বোচ্চ সাশ্রয় কোন মন্ত্রণালয় করেছে? জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বেশি সাশ্রয় করেছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগামী জুন পর্যন্ত যে প্রক্ষেপণ দেখা যাচ্ছে, তাতে দেশে খাদ্যের মজুতে কোনো ঘাটতি হবে না। এখনো ১৬ লাখ টনের বেশি খাদ্য মজুত রয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের সহায়তায় ওএমএসসহ বিভিন্ন খাদ্যসহায়তার কর্মসূচিগুলো চলবে।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর উপস্থিত ছিলেন না। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্রিফ করবে।

বৈঠকে খাদ্যের মজুত নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী রোজা পর্যন্ত আমাদের কোনো খাদ্যঘাটতি হবে না।’

বৈঠকে কৃষিসচিব জানিয়েছেন, বোরো মৌসুম শেষ হয়ে গেলে আগামী মে মাস পর্যন্ত খাদ্য উদ্বৃদ্ধ থাকবে। আর যে খাদ্য আছে, সেটি ছাড়াও এবারে আমনের ফলন ভালো হয়েছে। খরা দীর্ঘায়িত হওয়ায় সুবিধা হচ্ছে যে, নিম্নাঞ্চলেও আমন চাষ করা গেছে।

গমের সংকট নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গমের উৎপাদন এ দেশের পরিবেশগত নয়। এটি হলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ১২টি দেশের জন্য। এসব দেশে যে গম উৎপাদন হয়, তা রিপ্লেস করা কঠিন। তবে দেশে ৫৮-৫৯ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন করা গেছে। সভায় খাদ্যসচিব নিশ্চিত করেছেন, গম আনা হচ্ছে।

শেয়ার করুন