২০১৩ সালে নিখোঁজ হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, পিটার হাস সাহেব, আজ যদি দেখতাম আপনি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গেছেন সেই চিত্রটা বেশি ভালো লাগতো। কিন্তু উনি চলে গেছেন সুমনের বাড়িতে। আমি সবিনয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিমাসে কতজন গুম হয় সেই চিত্রটা কিন্তু সিএনএনে আমরা দেখেছি। কতজন ধর্ষণের শিকার হয় সেটাও আমরা দেখেছি। কতজন খুন হয় সেই চিত্রও আমরা দেখেছি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এমন সমালোচনা করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাহেব আজ ভোর বেলায় বুদ্ধিজীবী দিবসে তিনি সাজ্জাদুল সুমনের বাড়িতে গেলেন। ২০১৩ সালে গুম হয়েছিল। তার বাড়িতে উনি গেলেন।
হেফাজতের নেতাকর্মী গুম হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বলা হলো ৬৭ জনকে গুম করে খুন করেছে শেখ হাসিনার সরকার। পরে সাংবাদিকরা তদন্ত করে দেখলেন এদের অধিকাংশ মাদরাসায় পড়াশোনা করছে। সেই অবস্থায় এদের ছবি তুলেছে। … আজকে এই যে ৬৭ জন এরা কি গুম হয়েছে? এরা গুম হয়েছিল?
তিনি বলেন, আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যারা গুম নিয়ে কথা বলেন তাদেরকে বলবো ফরহাদ মজহার সাহেব নাকি গুম। কয়েক ঘণ্টা পর দেখা গেলো উনি খুলনা অভিমুখে বাসে। নিজে নিজেই চলে গেছেন, এটা কি গুম? এসব ঘটনা অনেক আছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মামলা হয়েছে, খুনের মামলা, মাদকের মামলা- এখন নিজেই নিজেকে নিখোঁজ করেছে। বিএনপির এ রকম অসংখ্য কর্মী আছে। মামলা থেকে রক্ষা পেতে নিখোঁজ। চকরিয়ার সালাউদ্দিন, কত অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সালাউদ্দিন গুম হয়ে গেলেন। নিজে নিজেই চলে গেলেন ভারত। এসব গুমের কাহিনী আপনাদের জানা উচিত মিস্টার পিটার হাস।
বিরোধীদের নিষেধাজ্ঞার মিশন ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এসব গুমের কাহিনী শুনিয়ে লাভ নেই। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাবেন বাংলাদেশের ওপর। মিশন ফেইলড, আমির খসরুর ওয়াশিংটন মিশন। নিষেধাজ্ঞা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ২০ দেশের ৭০ জনের বিরুদ্ধে। সেখানে বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশ কিন্তু নেই। তবুও লবিস্ট নিয়োগ করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমির খসরু একা যাননি। লবিস্ট নিয়োগ করেছে তারা। তার নাম কি জানেন, টোবি ক্যাডম্যান। তিনি বৃটিশ আইনজীবী। যুক্তরাজ্যের একজন আইনজীবী, তিনি লবিস্টের কাজও করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি (টোবি ক্যাডম্যান) সাক্ষাৎকারে আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য, পুলিশ এবং র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্র কথা রেখেছে, যুক্তরাজ্য আমার অনুরোধ রাখেনি’। এটা বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, টাকা-পয়সা দিয়ে এসব করছেন, কোথা থেকে আসে টাকা। কারা দেয় টাকা, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি সব খবর আসে। একটা মিটিং করেন, সাত দিন আগে থেকে পিকনিক। টাকা আসে কোথা থেকে?
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ।
সভা সঞ্চালনা করেন প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।