আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে দল। দশমবারের মতো দলীয় সভাপতি হিসেবে জাতির জনক ও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর রানিংমেট ওবায়দুল কাদের তৃৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু পদে যোগ-বিয়োগ হয়েছে। মত ও পথের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বকে অভিবাদন। অভিনন্দন। নতুন কমিটিতে যাঁরা স্থান পেয়েছেন, তাঁদেরকে শুভেচ্ছা। আমরা সফলতা কামনা করছি তাঁদের।
যে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্মেলনের মূল লক্ষ্য থাকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন আর অতীতের সাফল্য ও ব্যর্থতার নিরিখে সামনে চলার পথরেখা তৈরি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা করে থাকে রাজনৈতিক দলগুলোই। ফলে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মেলন ঘিরে জনগণের মধ্যে নানা আগ্রহ-উদ্দীপনা থাকে। দলের নতুন নেতৃত্ব ঘিরে থাকে জনগণের প্রত্যাশা। প্রাপ্তির হিসাবনিকাশও করেন তারা।
দেশের প্রাচীন ও মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির ঐতিহাসিক বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন গণতন্ত্রচর্চার প্রশ্নে সবসময়ই আপামর জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। দলটি থেকে তাদের প্রাপ্তি যেমন বেশি, তেমনই দলটির কাছে প্রত্যাশাও বেশি। ক্ষমতাসীন দলের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে দেশের সব শ্রেণি-পেশার রাজনীতিমনস্ক নাগরিকের মধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা, চুলচেরা বিশ্লেষণ আগামী বেশ কয়েকদিন ধরে চলবেই।
এবার এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে এসেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত সাত দশকের বেশি সময়ের মধ্যে বর্তমানে টানা তৃৃতীয়বারের মতো সরকারে আছে দল। এ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত নেতৃত্বের সামনে এক বছরের মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নতুন নেতৃত্ব তাই দলকে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আনতে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের জন্য মূল চালিকা শক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
জনপ্রিয়তা ধরে রেখে ও জনপ্রত্যাশা পূরণের মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মতো দলকে জনরায়ে ক্ষমতায় আনার চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের অতীতের কোনো নেতৃত্বকে নিতে হয়নি। আদালতের রায়ে তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন হয়ে থাকে নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও এখানে কিছু দায় থাকে। এমন কর্মকাণ্ড থেকে তাই সবার দূরে থাকা উচিত, যা বিতর্কের জন্ম দেয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ প্রায় অপরিবর্তিত থাকছে। রাজনৈতিক দক্ষতা, রাজপথসহ সর্বত্র প্রতিপক্ষের সব ধরনের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলার মতো সাংগঠনিক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির বেশিরভাগকে নতুন কমিটিতে রাখা হয়েছে।
আবারো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামনে নির্বাচন। তাই তিনি দলে বড় পরিবর্তন আনতে চাননি। নতুন কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা শেষে তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। আওয়ামী লীগের জনসমর্থন আছে। তবে ভোটার আনতে হবে। দল সংগঠিত না হলে সেটা হবে না। সদস্য সংগ্রহ অভিযান বাড়াতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, সেবা করতে হবে। ভবিষ্যতে নতুন নেতৃত্ব আনার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন তিনি।
গতকাল শনিবার দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের উদ্ভোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মরণ করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস দীর্ঘ সংগ্রামের। বাংলাদেশের মানুষ যেদিন পেট ভরিয়া খাইতে পাইবে, যেদিন প্রত্যেকের মুখে হাসি ফুটিবে, আওয়ামী লীগের সংগ্রাম সেই দিনই খ্যান্ত হইবে।’ আজকে আওয়ামী লীগ এটুকু বলতে পারে, দেশের কোনো মানুষ অভুক্ত থাকে না। তাই পিতাকে বলতে পারি, আমরা কথা দিলাম, আপনার জনগণ কখনো অভুক্ত থাকে না। আপনার জনগণ কষ্টে থাকবে না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আমাদের বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব জাতির জনকের দর্শন ও আদর্শ বাস্তবায়ন করবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করে তুলবে।
আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার দৃঢ়, অনমনীয় ও ত্যাগী নেতৃত্ব দেশকে বিশ্ব দরবারে স্বমহিমায় আরো উদ্ভাসিত করবে। দলের সব নেতাকর্মী দলীয় প্রধানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনকল্যাণে ব্রতী হবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।