‘মেট্রোরেলে দৈনিক তিন কোটি টাকা আয় করতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেট্রোরেল
ফাইল ছবি

মেট্রোরেলে বিদ্যুৎ খরচ, ব্যবস্থাপনা খরচ ও নির্মাণে যে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়েছে তাতে করে দৈনিক ৩ কোটি টাকা আয় করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক।

৯ জানুয়ারি (সোমবার) রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

এম এ এন সিদ্দিক বলেন, উদ্বোধনের পরদিন থেকে চলতি মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত মেট্রোরেলে ৯০ হাজার যাত্রী চলাচল করেছে। এতে আয় হয়েছে ৮৮ লাখ টাকা। তবে আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১২ কিলোমিটার রুট খুলে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, মেট্রোরেলের এই রুট থেকে বছরে হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে। তবে আমাদের যে পরিকল্পনা আছে সেই অনুযায়ী আমরা এই আয় করতে পারবো, কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের যে ঋণ আছে ও ব্যবস্থাপনা খরচ আছে, তাতে সমস্যা হবে না।

ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, বাকি অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও এক বছর। ডিসেম্বর নাগাদ এই অংশের উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।

এম এ এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল চলবে সকাল ৮টার পরিবর্তে সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। তবে গেট খোলা হবে ৮টা থেকে আর বন্ধ হবে ১২টায়। আর স্টেশনে যত যাত্রী থাকবেন, সব যাত্রী নিয়েই চলবে ট্রেন।

মেট্রোরেল নির্মাণে ঋণ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা

এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার (২১.২৬ কিলোমিটার)। এর মোট ব্যয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার ঋণ থেকে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে।

মেট্রোরেল প্রকল্পের মেয়াদকাল

প্রথমে প্রকল্পটির মেয়াদকাল ছিল ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে কাজ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প শেষ করতে সময় লাগবে আরও এক বছর ছয় মাস। সেক্ষেত্রে এটির মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়েছে।

মেট্রোরেলের স্টেশন সংখ্যা

মেট্রোরেলের মোট স্টেশন ১৭টি। এগুলো হলো উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল এবং কমলাপুর।

মেট্রোরেলের টিকিট ও কার্ড সংগ্রহ করবেন যেভাবে

মেট্রোরেলের টিকিটেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। এখানে কাগজের টিকিট নেই। স্টেশন থেকেই কার্ড কিনে যাতায়াত করতে হবে। প্রথম দিকে দুই ধরনের কার্ড পাওয়া যাচ্ছে। স্থায়ী ও এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) কার্ড। শুরুতে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া ৬০ টাকা।

১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড কিনতে লাগবে ২০০ টাকা। এই কার্ড দিয়ে যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনমতো টাকা রিচার্জ করা যাবে। তবে স্থায়ী কার্ড পেতে আগে থেকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করতে নিজের নাম, মাতা–পিতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা পাসপোর্ট নম্বর, মুঠোফোন নম্বর ও মেইল আইডি লাগবে।

স্টেশনের টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম) থেকে বিক্রয়কর্মীর সহায়তায় কেনা যাবে কার্ড। এছাড়া ভেন্ডিং মেশিন থেকে যাত্রী নিজেই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) কার্ডের জন্য নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। স্টেশন থেকে এই কার্ড কিনে যাত্রা করা যাবে। ট্রেন থেকে নামার সময় কার্ড রেখে দেওয়া হবে। সিঙ্গেল রাইডের কার্ডে নির্ধারণ থাকবে সময়। এরপর এই কার্ড আর কার্যকর থাকবে না। তবে যারা এটিএম কার্ড নিয়মিত ব্যবহার করেন, তাদের জন্য মেট্রোরেলের সেবা নেওয়া সহজ হবে। কারণ মেট্রোরেলের টিকিট, কার্ড ও টাকা জমা দেওয়ার পদ্ধতি একই ধরনের।

নারী ও বয়স্কদের জন্য আলাদা কোচ বরাদ্দ

মেট্রোরেলে প্রতিটি ট্রেনে নারী যাত্রীদের জন্য একটি করে কোচ বরাদ্দ থাকবে। ওই কোচে সর্বোচ্চ ৩৯০ জন নারী একই সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন। পাশাপাশি অন্য কোচেও যাতায়াত করতে পারবেন নারীরা। অন্তঃসত্ত্বা ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য মেট্রোরেলের কোচের আসন সংরক্ষিত থাকবে। এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য মেট্রোর সব সেবায়ই রাখা হয়েছে বিশেষ সুবিধা।

মেট্রোরেলের আসন সংখ্যা

আপাতত ছয় কোচবিশিষ্ট ২৪ সেট চালু থাকবে। তবে ভবিষ্যতে আট কোচে উন্নীত করা যাবে। মাঝের চারটি কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৯০ জন, ট্রেইলর কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন যাত্রী পরিবহন করা যাবে। ছয় কোচবিশিষ্ট মেট্রোরেলে মোট আসন সংখ্যা ৩০৬টি। মাঝের চারটি কোচের প্রতিটিতে আসন সংখ্যা ৫৪টি, ট্রেইলর কোচের প্রতিটিতে আসন সংখ্যা ৪৫টি।

মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের রুট বৃদ্ধি

মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। কমলাপুর রেলস্টেশনের সঙ্গে মেট্রোরেলের সংযোগ স্থাপনের জন্যই প্রধানমন্ত্রী রুট বাড়ানোর নির্দেশনা দেন। এরই মধ্যে বাড়তি অংশে ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ এবং ই অ্যান্ড এম সিস্টেম সংগ্রহ করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন