গত বছর লোকরঞ্জনবাদী নেতাদের হারিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রগতিশীল ও মধ্যপন্থীরা ক্ষমতায় এসেছেন। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষণ বলছে, গত ২০ বছরের মধ্যে এখন লোকরঞ্জনবাদী ক্ষমতাসীন নেতার সংখ্যা সবচেয়ে কম। এখন বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৭০ কোটি মানুষ এ লোকরঞ্জনবাদী নেতাদের শাসনে আছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালটি লোকরঞ্জনবাদী নেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে পারে। এ বছর তুরস্কে ও পোল্যান্ডে নির্বাচন হবে। দুই দেশে লোকরঞ্জনবাদী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। দুই দেশেই লোকরঞ্জনবাদী সরকারের পতন হতে পারে। তবে এটা নির্ভর করবে বিরোধীদের ওপর। কারণ, বিরোধী দলগুলো বিভক্ত। তারা যদি জোট করতে পারে, তবেই লোকরঞ্জনবাদীদের ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
২০২২ সালে ব্রাজিলে নির্বাচনে হেরে গেছেন ডানপন্থী জইর বলসোনারো। স্লোভেনিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়েছে ইয়ানেস জ্যানকে। ফিলিপাইনে সংবিধান অনুসারে, একবারের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন না। ফলে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে আর ক্ষমতায় ফিরতে পারছেন না। শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
লাতিন আমেরিকায় লোকরঞ্জনবাদীরা বেশ দুর্বল হয়ে পড়ছেন, বিশেষ করে ব্রাজিলে বলসোনারোর ক্ষমতা হারানোর পর এটা আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে উদার বামপন্থীরা এগিয়ে গেছেন। তারা লোকরঞ্জনবাদী নেতাদের বাগাড়ম্বর খারিজ করে দিয়েছেন। লোকরঞ্জনবাদী বামপন্থীরা শিল্পায়নের জাতীয়করণের যে পথে হেঁটেছিলেন, তা থেকে বেরিয়ে এখন আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছেন তারা।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের প্রতিষ্ঠিত টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউটের ওই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, মধ্যবর্তী নির্বাচনে যেসব প্রার্থীকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন দিয়েছিলেন, তাদের অনেকে হেরে গেছেন। মধ্যপন্থীদের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে তারা খুব ভালো করতে পারেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় প্রাথমিক বাছাইয়ে মধ্যপন্থী রিপাবলিকানদের কাছে হেরেছেন ট্রাম্প–সমর্থিত প্রার্থীরা। এরপর নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে অধিকাংশ ট্রাম্প–সমর্থিত প্রার্থী হেরেছেন। এতে রিপাবলিকান দলের সিনেটে আসন কমেছে এবং বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর পদও হাতছাড়া হয়েছে দলটির। সবচেয়ে বড় কথা, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় স্থানীয় পর্যায়ে যারা নির্বাচনী প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, সেসব পদে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হেরেছে।
২০২০ সালের নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার ট্রাম্পের চেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস। একই সঙ্গে ২০২২ সালে ভোটাররা ট্রাম্পপন্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে এর সঙ্গে সতর্কবার্তাও রয়েছে। টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউটের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রে ‘ট্রাম্পবাদীদের প্রত্যাখ্যানের’ অর্থ এ নয় যে সাংস্কৃতিক লোকরঞ্জনবাদ বছরের পর বছর হারতে থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি সাংস্কৃতিক লোকরঞ্জনবাদে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। ট্রাম্প–সমর্থিত প্রার্থীদের হার কিংবা ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রার্থী হওয়া নিয়ে দোলাচলের পরও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি সাংস্কৃতিক লোকরঞ্জনবাদে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প যদি হেরেও যান, রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে সাংস্কৃতিক লোকরঞ্জনবাদ বেশ জোরালোভাবেই থেকে যাবে।
যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ দল দেশটির লোকরঞ্জনবাদী ডানপন্থী দল রিফর্ম ইউকের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। ২০১৯ সালে দলটি কনজারভেটিভ দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ৩১৭টি আসনে প্রার্থী দেয়নি। তবে রিফর্ম ইউকে এবার ঘোষণা দিয়েছে, তারা সব দলের সব প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়বে। রিচার্ড টিসের এই দলের জনসমর্থনের হার মোটে ৮ শতাংশ। মূলত কনজারভেটিভ পার্টির প্রতি অসন্তুষ্টি থেকে ভোটাররা এখন রিফর্ম ইউকে দলকে ভোট দেন।
হয়তো রিফর্ম ইউকে কোনো আসনে জয়ী হবে না। রিফর্ম ইউকে দল যদি এবারের নির্বাচনে সব আসনে প্রার্থী দেয় এবং তাতে ডানপন্থী লোকরঞ্জনবাদী রাজনৈতিক দল ব্রেক্সিট পার্টি ভালো করে, তবে সেটিও হবে তাদের জন্য সফলতা।
প্রতিবেদনটির লেখক ব্রেট মেয়ার বলেন, উল্লেখসংখ্যক দেশে প্রগতিশীল মধ্যপন্থীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। ২০২২ সালে লোকরঞ্জনবাদীদের পেছনে ফেলেছেন মধ্যপন্থীরা। গত বছর বেশ কয়েকটি দেশে লোকরঞ্জনবাদীরা ক্ষমতা হারিয়েছেন। আমেরিকা অঞ্চলজুড়ে লোকরঞ্জনবাদীদের হারিয়ে দিয়েছেন প্রগতিশীল মধ্যপন্থীরা। একই সঙ্গে মধ্যপন্থী প্রগতিশীলা তরুণ নেতারা প্রবীণদের ও লোকরঞ্জনবাদী বামপন্থীদের হারিয়ে দিয়েছেন।