ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে চলমান অস্থিরতার আংশিক অবসান হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পর চলমান আদালত বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবীরা। আজ শনিবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির ভবনে সাধারণ সভা থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ সময় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুলসহ জেলার সব আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভুইয়া জানান, আইনজীবীদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে রোববার (১৫ জানুয়ারি) থেকে আইনজীবীরা আদালতে যাবেন। তবে জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বদলির আগ পর্যন্ত তাদের আদালত বর্জন অব্যাহত থাকবে। এছাড়া নাজির মোমিনুল ইসলামকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলি করা হবে। যদি আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে ওই দুই বিচারকসহ নাজিরকে অপসারণ করা না হয়, তাহলে সাধারণ সভা থেকে আবারো সকল আদালত বর্জনের কর্মসূচি নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন।
এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারীরা। এ অবস্থায় জেলা জজ শারমিন নিগার, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ মোহাম্মদ ফারুক ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ, বিচারকের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগানসহ বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে ২ দফায় ২৪ আইনজীবীকে উচ্চ আদালতে তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে এজলাসে ঢুকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের ঘটনায় বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের বেঞ্চ ৬ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন।
এজলাস চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বিচারকাজ বিঘ্নিত করার অভিযোগে ১০ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ আইনজীবীর প্রতি আদালত অবমাননার রুল দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। তাদেরকে ২৩ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৫, ৮ ও ৯ জানুয়ারি প্রথম দফায়, ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আইনজীবী সমিতি তিন কার্যদিবস করে মোট ছয় দিন কর্মবিরতি পালন করে। দাবি পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনজীবী সমিতির ভবনের দ্বিতীয় তলায় আইনজীবীদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে দাবি পূরণ না হওয়ায় আরও তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতি বাড়ানো হয়। এরই মধ্যে আজ কর্মবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে আইনজীবী সমিতি।