আব্দুস সাত্তারকে বিজয়ী করে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হবে: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, গণতান্ত্রের অভিযাত্রাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সাহস করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে নতুন একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেটা হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে গণতন্ত্রের ঝাণ্ডাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে সরাইল উপজেলার অরুয়াইলে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া সাবেক এমপি উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার সমর্থনে এক জনসভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকতাদির চৌধুরী বলেন,গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাত্তার সাহেব চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। তাই নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হবে। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে এবং আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে সমর্থন করি। তাই আপনাদের পাশের উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে আপনাদের কাছে দাবি নিয়ে এসেছি, আবদুস সাত্তারকে উপনির্বাচনে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।

সাত্তারকে বিএনপি ডাস্টবিনে ছুড়েছে, পাশে দাঁড়িয়েছেন শেখ হাসিনা

জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, বিএনপি তাঁকে সাত্তার ভূঁইয়াকে টিস্যু পেপারের মতো ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ডাস্টবিনে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এই অসহায় মানুষটির পাশে দাঁড়ালেন। রবিউল ভাই (র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী) ও আল মামুন সরকারকে (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক) নির্দেশ দিলেন, তোমরা সব প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলো এবং ওনার পক্ষে দাঁড়াও। আমাকে তাঁর বার্তা দিয়ে পাঠালেন। আমি তো এখানে সবার অচেনা। আমি এসেছি বঙ্গবন্ধুকন্যার বার্তা নিয়ে। তাই ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে আবদুস সাত্তারকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে সাত্তার সাহেবের অপমানের এবং তারেক জিয়ার বেয়াদবির জবাব দিতে হবে।

তিনি বলেন, সাত্তার ভাই আমাদের দলের কেউ নন। তার সুহৃদ আমরা। তাঁকে বিএনপি লাথি মেরেছে। তাই তাঁর পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। আপনারাও তাঁর পাশে থাকবেন। তারেকের বেয়াদবির জবাব দেবেন।

আহমদ হোসেন আরও বলেন, বিএনপি একটি বিচিত্র দল। একটা মানুষ পাঁচবার এমপি হলেন, জীবনের অনেক কিছু দিলেন। আর তাঁকে এভাবে ফেলে দিলো। এক ছাগলের তিন বাচ্চা। দুটি দুধ খায় আর একটা লাফায়। বাংলাদেশে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হচ্ছে বিএনপি।

এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াসহ অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার, স্থানীয় নারী সংসদ সদস্য উম্মে সালমা ফাতেমা বেগম শিউলী আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হেলালউদ্দিন, উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু প্রমুখ।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাষানী, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা, জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ।

এর মধ্যে জিয়াউল হক মৃধা প্রতীক বরাদ্দের পর বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়া এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ না করলেও উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে অনেকেই সাত্তারের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন গঠিত। দুই উপজেলায় রয়েছে ১৭টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় রয়েছে ৯টি ইউনিয়ন ও আশুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ৮টি ইউনিয়ন।

উপনির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯ এবং আশুগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার। উপনির্বাচনে মোট কেন্দ্র ১৩২টি। এরমধ্যে সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৮৪টি ও আশুগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৪৮টি ভোট কেন্দ্র করা হয়েছে।

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপনির্বাচন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। নির্বাচনে সংসদীয় আসনে অফিসারসহ এক হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার কথা রয়েছে। এছাড়াও থাকবে ৪ প্লাটুন বিজিবির সদস্য, র‍্যাবের ৯টি টিম, পুলিশের ৯টি মোবাইল টিম ও ৪টি স্ট্রাইকিং টিম। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে ৩ জন পুলিশ, অস্ত্রধারী ২ জন আনসার, লাঠিধারী ১০ জন আনসার ও ২ জন গ্রাম পুলিশ। উপনির্বাচনে ১৭টি ইউনিয়নে ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

শেয়ার করুন