ইরানের সামরিক কারখানায় ড্রোন হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইরানের ইসফাহান শহরের একটি প্রতিরক্ষা কারখানায় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) মধ্যরাতে অন্তত তিনটি ড্রোন দিয়ে এ হামলা চালানো হয় বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে। হামলা চালাতে আসা সবগুলো ড্রোনই ভূপাতিত করেছে ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানায়, শনিবার গভীর রাতের ওই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ধ্বংস হওয়া ড্রোনের টুকরায় সামরিক স্থাপনার একটি ছাদের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। কারা এই হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি মন্ত্রণালয়। তবে ইসরায়েল জড়িত থাকতে পারে বলে দেশটির কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন।

universel cardiac hospital

এদিকে সিবিসি, সিএনবিসি ও ডয়েচে ভেলেসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানায়, একই সময়ে পৃথকভাবে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজের কাছে একটি শিল্প অঞ্চলে একটি তেল শোধনাগারে আগুন লেগেছে। হঠাৎ এমন আগুনের কারণ এখনও জানা যায়নি। দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করার ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

ইরান ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ছায়া যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। প্রায়ই ইরানের সামরিক এবং পারমাণবিক স্থাপনায় ও ব্যক্তিদের ওপর গোপন হামলা হয়, যাতে ইসরায়েলকে দোষ দেয় ইরান। আর ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও কখনো মোসাদ পরিচালিত গোপন হামলায় জড়িত থাকার কথা সরাসরি অস্বীকার বা স্বীকার করেনি।

গত বছর ইরান বলেছিল যে রাজধানী তেহরানের পূর্বে পারচিন সামরিক ও অস্ত্র উন্নয়ন ঘাঁটিতে এক দুর্ঘটনায় একজন প্রকৌশলী নিহত এবং অপর একজন কর্মচারী আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় আরও বিশদ বিবরণ না দিয়ে এটিকে একটি দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করে।

তবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বলেছে, তারা সন্দেহ করেছে যে ইরান এমন কোনো বিস্ফোরক ট্রিগারের পরীক্ষা চালিয়েছে যা পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।

২০২১ সালের এপ্রিলে, ইরান তার ভূগর্ভস্থ নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছিল। হামলায় অনেক সেন্ট্রিফিউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

ইসরায়েল এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে ইসরায়েলি মিডিয়া ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করেছে যে দেশটি একটি বিধ্বংসী সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে যা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ব্ল্যাকআউট করেছে।

ইরান বরাবরই বলে আসছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, পশ্চিমা দেশগুলি এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বলেছে যে ইরান ২০০৩ সাল পর্যন্ত একটি সংগঠিত পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়েছিল।

এদিকে জাতিসংঘের শীর্ষ পরমাণু কর্মকর্তা রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন যে ইরান চাইলেই বেশ কিছু পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ফেলতে পারে। কারণ দেশটির কাছে যথেষ্ট পরিমাণে উচ্চসমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে।

বিশ্বশক্তির সঙ্গে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি করে ইরান। কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকেই পশ্চিমা ও ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল উভয়ই ইরানকে যেকোনো উপায়ে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপও চালানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে।

শেয়ার করুন