মিয়ানমারে দুই বছর আগে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থান হয়। অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। এ জান্তা সরকারের সময় মিয়ানমার থেকে বিশ্বের বড় বড় জ্বালানি তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো কোটি কোটি ডলার কামাচ্ছে। আয়ের বিপরীতে এসব কোম্পানির দেওয়া করসংক্রান্ত নথি হাতে এসেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র ‘গার্ডিয়ান’–এর কাছে। এসব নথিতে জান্তার সঙ্গে ব্যবসা করে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর মুনাফার বিষয়টি উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ারের ভাষ্য অনুযায়ী, সামরিক জান্তারা ক্ষমতা দখলের পর ‘মিয়ানমারে প্রতিদিন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে’। পর্যবেক্ষক সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের হিসাবে, গত দুই বছরে ২ হাজার ৯৪০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শিশু, সাধারণ মানুষ ও গণতন্ত্রপন্থী অধিকারকর্মীরা রয়েছেন। এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর দমন–পীড়নে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।
একদিকে যখন নিরাপত্তা বাহিনীর এমন সহিংসতা চলছে, তখন অন্যদিকে কোটি কোটি ডলার কামাচ্ছে পশ্চিমা তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো। মিয়ানমারের কর নিয়ে ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যাচ্ছে, সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে কোটি কোটি ডলার কামানো তেল ও গ্যাসক্ষেত্রের ঠিকাদারের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের।
এসব নথি সংগ্রহ করেছে ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়্যাল অব সিক্রেটস নামের একটি অলাভজনক সংস্থা। এটিকে উইকিলিকসের ‘উত্তরসূরি’ বলা হয়ে থাকে। নথিগুলো বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করেছে মিয়ানমারের মানবাধিকার সংস্থা জাস্টিস ফর মিয়ানমার, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ফাইন্যান্স আনকাভারড ও গার্ডিয়ান।
মিয়ানমারে ব্যবসা করলে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে জানিয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপরও সে দেশে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় তেল–গ্যাস কোম্পানির কিছু অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারের সরকারি এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে, যাদের থেকে সরাসরি উপকৃত হচ্ছে জান্তারা। এর মধ্যে একটি হলো মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান মিয়ানমার অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজ (এমওজিই)।