যানজটের চাপে কি ‘বিপর্যস্ত’ ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাড়ছে যানজট
ফাইল ছবি

যানজট নিয়ন্ত্রণ ও নিরসনের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা। রাজধানীতে ভয়াল যানজটের চাপে সেই ট্রাফিক ব্যবস্থা ‘বিপর্যস্ত’ হয়ে পড়েছে কী না, এ প্রশ্ন এখন অনেকের। গত বেশ কিছুদিন ধরে মহানগরীর সড়কে দেখা যাচ্ছে বিশৃঙ্খলা। কিছুতেই যেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না নগরবাসীর অসহনীয় ভোগান্তির যানজট। এমনকি সরকারি ছুটির দিনেও রাজধানীর বাসিন্দারা যানজটের দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

তীব্র যানজটে নাকাল ঢাকাবাসী। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার ফলে যানজট নিরসনে পরিকল্পনা ও মহাপরিকল্পনা কাজে আসছে না। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও যথাযথ সুফল মিলছে না। আবার যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সময় দেওয়া আশ্বাসের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে রাজধানীতে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে নাকাল হওয়া বাসিন্দাদের যেন ‘নিয়তি’ হয়ে উঠছে।

universel cardiac hospital

বিশেষজ্ঞরা মত ও পথকে বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি শহরের রাস্তার পরিমাণ হওয়া উচিত মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ। অথচ ঢাকায় তা মাত্র ৭-৮ শতাংশ। প্রায় দুই কোটি মানুষের ‘মেগাসিটি’ ঢাকায় জনসংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে যানবাহন। বাড়ছে না রাস্তা। ফলে বাড়ছে যানজট। বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ির উল্লম্ফনে যানজটের অবস্থা বেশি খারাপ হচ্ছে।

এদিকে দিনের পর দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকলেও বাড়েনি সড়ক। চালকরা লাইন-লেন না মেনেই গাড়ি চালাচ্ছেন, যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছেন। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু ক্ষেত্রে আধুনিক সিগন্যাল লাইট বসিয়েও পুলিশ হাতের ইশারায়ই সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করায় সড়কে নেই ডিজিটালের ছোঁয়া। শৃঙ্খলাহীন ট্রাফিক ব্যবস্থায় যানজট বাড়লেও এক শ্রেণির ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য ও মামলা দায়েরে বেশি আগ্রহ বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বর্তমানে স্বাভাবিক ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গাড়ি ঢাকার সড়কে চলছে। যানজট নিরসনের দায় ট্রাফিক পুলিশের ঘাড়ে বর্তায়। যদিও দায় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার। ট্রাফিক পুলিশ সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করলেও ট্রাফিক আইন মানার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ বিশৃঙ্খল। রয়েছে ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনভিজ্ঞ ও মেয়াদবিহীন লাইসেন্সের চালক, সবাই যেন নেমে পড়েছেন সড়কে।

রাস্তাগুলোতে একদিকে গাড়ির যানজট, অন্যদিকে এ স্থবির পরিস্থিতিতে যানবাহন চালকরাও ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা না মানায় অবস্থা আরো প্রকট হয়ে ওঠেছে। আর নিয়ম মেনে না চলার কারণে সৃষ্ট যানজট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। রাস্তা দখল করেও বসানো হয়েছে অস্থায়ী দোকান। সেখানে চলে চাঁদাবাজি। অনেক সময় রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে কিছু অসাধু ট্রাফিক পুলিশ টাকা আদায় করেন। মামলার কারণেও দাঁড় করানোর কারণে পেছনের গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ কারণেও যানজট দীর্ঘ হয়।

ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে অবশেষে হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা দেন তারা। সড়কের যানজটের চিত্র দেখে অনেকে আবার বাসায়ও ফিরে যান। কিছু সড়কে বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। যানজটের একই চিত্র পুরো রাজধানীতে।

শেয়ার করুন