তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যুগের প্রয়োজনে প্রেস কাউন্সিল আরও শক্তিশালী হবে। অনলাইন পত্রিকাগুলোও এর আওতায় আসবে।
‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে কাউন্সিল মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী এর আগে কাউন্সিল চত্বরে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের সভাপতিত্বে কাউন্সিল সদস্যদের মধ্যে মোজাফফর হোসেন পল্টু, ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও এম জি কিবরিয়া চৌধুরী সভায় বক্তব্য রাখেন।
প্রেস কাউন্সিলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত তুলে ধরে ড. হাছান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নেতৃত্বে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্র ন্যায়-নীতি ও যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে পরিচালনা ও গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত গভীরে প্রোথিত করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে সংবাদপত্রের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং একইসঙ্গে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা যাতে একটি জুডিসিয়াল বোর্ডের কাছে গিয়ে তাদের অনুযোগ উপস্থাপন করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে তিনি এ প্রেস কাউন্সিল গঠন করেন।
যুগের সঙ্গে গণমাধ্যমের বহুমাত্রিকতা তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে সংবাদমাধ্যম শুধু প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, যখন প্রেস কাউন্সিল গঠিত হয়েছিল তখন অনলাইন গণমাধ্যম ছিল না এবং এত সংবাদপত্রও ছিল না। ফলে প্রেস কাউন্সিল তার আইন অনুসারে সংবাদপত্র ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে না।
অনলাইন পত্রিকা ও পত্রিকার অনলাইন ভার্সনগুলোকে আওতায় আনা ও প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাউন্সিলের সদস্যরাই কয়েক বছর ধরে অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি খসড়া আইন চূড়ান্ত করেছেন বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রেস কাউন্সিলের বেশির ভাগ সদস্য সাংবাদিক, সাংবাদিক সংগঠনের নেতা ও পত্রিকার সম্পাদক। তারাই এটি চূড়ান্ত করেছেন। কিন্তু খসড়া চূড়ান্ত হয়ে যখন আইন প্রণয়নের দিকে যাচ্ছিল, তখন এর বিরোধিতা শুরু হয়েছে। সব দেশেই আইন সংশোধন করা হয়। অথচ বাংলাদেশে আইন যুগোপযোগী করতে গেলেই একটা পক্ষ এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। আশা করি, প্রকৃত সাংবাদিকরা এ বিষয়ে এগিয়ে আসবেন।
যারা বিরোধিতা করছেন, তাদের নিয়ে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে বসতে বলেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আলাপ-আলোচনা করলে ভুল বোঝাবুঝির নিরসন হবে। কারণ প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করা মানে সাংবাদিকদের শক্তিশালী করা।
বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, এখন ফেসবুক পেজ খুলে সেটিকেও গণমাধ্যম হিসেবে প্রচার করা হয়। সংশ্লিষ্ট সবাই আবার সাংবাদিক পরিচয় দেন। গ্রামেগঞ্জে এখন যে অনলাইন পোর্টাল, ফেসবুক পেজ… আবার একটা ক্যামেরা নিয়ে ওটাই একটা মিডিয়া পরিচয় দিচ্ছে, এটিই বাস্তবতা। ফলে কোনটি প্রকৃত সংবাদমাধ্যম এবং কে সাংবাদিক, তা নিয়ে বিরাট বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এগুলোর একটা সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যারা সত্যিকারের সাংবাদিক তারা এর সঙ্গে কখনই যুক্ত নয়। সাংবাদিকরাও চায় এগুলো থেকে মুক্তি। সাংবাদিক সংগঠনগুলোর দাবিও এটি। আমি আপনাদের দাবির সঙ্গে একমত। এ জন্য সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন প্রয়োজন। প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়েই এটি করা বাঞ্ছনীয়।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, সরকার গণমাধ্যমবান্ধব। বাংলাদেশে গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে, সেটি অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদাহরণ। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বিকাশ অপরিহার্য। এ লক্ষ্য নিয়েই আমাদের সরকার কাজ করছে।