বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে হলে প্রতি বছর ৮০০ কোটি টাকা বাংলাদেশকে খরচ করতে হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও প্রতি বছর এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা এই মুহূর্তে যৌক্তিক হবে কি না তা ভাবতে হবে।
মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাপী সংস্থাটি বৃহত্তর সংস্কারের সময় বাংলাদেশ বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা করার জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করবে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা একদিন বাংলাদেশেরও তৈরি হবে। তবে এই মুহূর্তে এটার পক্ষে বেশি মতামত আসবে না। যদিও আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আকাঙ্ক্ষাও আছে।
তিনি জানান, সরকার সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষাসহ আমরা সব ভাষার প্রতি সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, জাতিসংঘের অন্য একটি অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে সদস্য দেশগুলোর কোনো বিরোধিতা নেই। তবে জাতিসংঘ বলেছে, এর অর্থায়নের জন্য তাদের কাছে অর্থ নেই।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুয়ে ও দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও বিদেশি কূটনীতিকরা। সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশ, কেনিয়া, রাশিয়া, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া ও মালদ্বীপের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিটি ভাষার মূল্য ও সম্মান রয়েছে এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব গঠনে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য জীবন উৎসর্গ করে আমাদের মাতৃভূমির সাহসী সন্তানরা বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ভাষা আন্দোলনের বিজয় বাঙালিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনকে গতি ও শক্তি দিয়েছে।
একুশের চেতনায় সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত সম্প্রীতি বজায় থাকবে আশা প্রকাশ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর প্রথম ভাষণ বাংলায় দিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিরা জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রেখেছেন, তা বিশ্ববাসীকে তিনি জানিয়েছেন। পিতার মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন।