‘মাঠে কাজ করা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার নয়’

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

যুবসমাজকে কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের যুবসমাজকে কৃষিকাজে আরও সম্পৃক্ত করা দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকে সম্পৃক্ত করা দরকার। মাঠে কাজ করা বা ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় নয়। সেভাবেই আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে।

২৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান ও বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন শেষে এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন যখন কৃষিশ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না ধান কাটতে, আমি তখন ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের সব ছেলেমেয়েকে নির্দেশ দিলাম, তোমরা মাঠে যাও, ধান কাটো কৃষকের পাশে থাকো। তারা কিন্তু কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু খাদ্যনিরাপত্তা ও ধান উৎপাদনের গুরুত্ব বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দুনিয়াভরে চেষ্টা করেও আমি চাল কিনতে পারছি না। যদি চাল কিনতে হয় তাহলে আপনাদের চাল পয়দা করে খেতে হবে। ১৯৭৪ সালে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। নগদ অর্থ দিয়ে কেনার খাদ্য বাংলাদেশে প্রবেশ হয় নাই। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। জাতির পিতা চেয়েছিলেন আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করবো। ১৯৭৩ সালে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট…এটাকে আইন করে, প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গবেষণার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন।

তিনি বলেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে এটাই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষকদের সুবিধার জন্য ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দেন। পাকিস্তান আমলে দেওয়া ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্ত করে দেন। ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ করা শুরু করেন। গৃহহীনদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করা শুরু করেন। কৃষিতে বাজেট বরাদ্দে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। বক্তব্য রাখেন কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিচার্স ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ড. জেইন বালিই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর প্রমুখ।

এসময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সিমিন হোসেন রিমি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ মন্ডল, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, ধান ও কৃষি বিজ্ঞানীসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে ব্রি’র গৌরব ও সাফল্যের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পায়রা ও বেলুন ওড়ান। বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। পরে ব্রির ইনোভেশনস পরিদর্শন শেষে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেখানে তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রী ব্রি উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধরনের কৃষিপ্রযুক্তি যন্ত্রাংশ ও কৃষির বিভিন্ন ব্রিডিং প্ল্যান্ট ঘুরে দেখেন।

শেয়ার করুন