যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রাশিয়ার এই জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে দেয়া হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে ৬৯টি মার্কিন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রাশিয়ার জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ মনে করে, এর ফলে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কে কোনও ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে না।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক সেহেলি সাবরিন রাশিয়ার জাহাজ এবং মস্কোতে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানের তলবের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

বাংলাদেশ কেন আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা মানছে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি বাণিজ্যনির্ভর দেশ। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিদ্যমান রাখছি। আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আমাদের জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অনেক বেশি।’

নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজটি শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য দেশেও ভিড়তে পারেনি বলে তিনি জানান। বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না পেরে তারা তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে অন্যান্য অনেক দেশে ভিড়তে চেয়েছিল, কিন্তু সেক্ষেত্রেও তারা সেটি পারেনি। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য দেশগুলোও এ বিষয়ে একটি অবস্থান নিয়েছে বলে তিনি জানান।

বিরূপ প্রভাব পড়বে না

বাংলাদেশ ও রাশিয়া এখনও একসঙ্গে কাজ করছে জানিয়ে সেহেলি সাবরিন বলেন, আমরা এখনও একযোগে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের বোঝাপড়া অত্যন্ত ভালো। আমরা মনে করি না যে জাহাজের বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, সেটিতে কোনও বিরূপ প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, আমরা মনি করি যে দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কোনও বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা

গত ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে ৬৯টি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজের বিষয়ে আলোচনার জন্য রুশ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার রোদেনকো আন্দ্রে ইউরেভিচ ডেকে পাঠান। পরে এ বিষয়ে ঢাকায় একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।

সেহেলি সাবরিন জানান, রাশিয়ার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং সেখানে নির্দিষ্ট কোনও জাহাজের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজকে কেন বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হবে না, সে সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন—কী কারণে জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে পারেনি, সেটি ব্যাখ্যা করেছেন বলে তিনি জানান।’

রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন এবং এটি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে জানিয়ে সেহেলি সাবরিন বলেন, ‘রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে আমাদের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরির ক্ষেত্রে দেশটি অনেক সহায়তা করেছিল। তারা দুইবার আমাদের পক্ষে জাতিসংঘে ভেটো দিয়েছিল।’

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত

রাশিয়ার ৬৯টি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ৬৯টি জাহাজের তালিকার বিষয়টি সবাই জানে এবং এ বিষয়ে সেহেলি সাবরিন জানান, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনও নির্দেশনা নয়, বরং আমরাই ১৬ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জানতে পেয়েছি যে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন