কার্ডের মাধ্যমে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রির নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

অনিয়ম রোধে কার্ডের মাধ্যমে ওএমএসের (খোলা বাজারে বিক্রি) চাল ও আটা বিক্রির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে আমরা ওএমএস যেটি করি সেটি চলমান আছে। কিন্তু এটার ব্যবস্থাপনার কিছু ঘাটতি সরকারের নজরে এসেছে। কাজটা করতে গিয়ে এ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি কেবিনেটে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন এ ব্যবস্থাপনা ঘাটতির উন্নতি করতে হবে। উনি বলেছেন, এখন এক কোটি পরিবারকে টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে যেভাবে সহযোগিতা করা হয়, ওএমএসটাও সেভাবে কার্ডের মাধ্যমে দেওয়া। যেন লোকজনকে অহেতুক দীর্ঘমেয়াদি ভিড়ে না থাকতে হয়। তাদের মধ্যে যেন একটা শৃঙ্খলা থাকে। সেজন্য কার্ডের মাধ্যমে এটা দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন এ ব্যপারে বাকি কাজটুকু আমরা করবো।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কার্ডের মাধ্যমে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি পরিচালনার জন্য বলেছেন। যেন পরিচালনার ঘাটতি না থাকে।

কার্ড কীভাবে হবে, কারা পাবে- জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, সেই অংশটুকু আমরা এখন মন্ত্রণালয়ের (খাদ্য মন্ত্রণালয়) সঙ্গে বসে ঠিক করবো।

অব্যবস্থাপনার ধরন বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, নানারকম অনিয়ম-অব‌্যবস্থাপনার কথা হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে, তার নজরে এসেছে। এজন্য উনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন।

বর্তমানে সরকার ঢাকাসহ সারাদেশে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের কাছে চাল ও আটা বিক্রি করছে। একজন সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল ও ৩ কেজি আটা কিনতে পারেন। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা প্রতি কেজি ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে সুলভ মূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল, বলছেন ভোক্তারা।

এছাড়া ওএমএসের চাল ও আটা পেতে ক্রেতাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেককে চাল ও আটা না পেয়ে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।

ওএমএস পণ্যের ক্রেতারা বলছেন, তারা প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি কিনতে পারেন। তাতে তাদের ব্যয় হয় ১৫০ টাকা। অথচ বাজারে একই পরিমাণ চালের দাম ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। তারচেয়েও বেশি সাশ্রয় হচ্ছে আটায়। কারণ, প্রতি কেজি ওএমএসের আটার দাম ২৪ টাকা, যা বাজারে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। ফলে ওএমএসের ৫ কেজি আটায় তাদের সাশ্রয় হয় ২০০ টাকারও বেশি।

বর্তমান ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে ওএমএসের চাল ও আটার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষের অপেক্ষা নতুন নয়। এসব ডিলারের দোকানের সামনে বিশৃঙ্খলাও এখন নিত্যদিনের চিত্র। বিশেষত বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব পণ্যের চাহিদা তুঙ্গে।

কিন্তু বরাদ্দ কম থাকায় নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকারের ভর্তুকি দামে চাল-আটা বিক্রির উদ্যোগে খুব বেশি সুফল মিলছে না। এক্ষেত্রে পণ্যের বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই।

সাধারণ মানুষ ও ডিলাররা বলছেন, ঢাকার ৭০টি স্থানে বিক্রি করা হয় ওএমএসের পণ্য। তবে নিম্নবিত্ত ও বস্তি এলাকায় ওএমএসের ট্রাকে পণ্য বিক্রির পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। এখন ওএমএসের ট্রাকের সামনে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। বরাদ্দ কম থাকায় পণ্য কিনতে না পেরে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ খালি হাতে ঘরে ফিরছেন।

শেয়ার করুন