ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া বক্তব্য গ্রহণযোগ্য মনে না হওয়ায় বাড়িতে ফেরার পথে ইসলামি (সুন্নি) বক্তা মাওলানা শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়ার ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর আজ বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় র্যাব-৯।
জেলা শহরের সরকারপাড়া এলাকায় র্যাব-৯-এর অস্থায়ী কার্যালয়ে বেলা দুইটায় এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন র্যাব-৯-এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার মুমিনুল হক।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর আগে আখাউড়া থানা-পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বিজয়নগর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের জাকির হোসেন ওরফে জাক্কু (৪৮), একই গ্রামের মাহবুবুল আল শিমুল (৩৩), একই উপজেলার চাওড়া গ্রামের মো. সুমন (৩৫) ও কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার চাওড়া দৌলতবাড়ি গ্রামের আমিরুল ইসলাম (২০)। এ ছাড়া বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল গ্রামের শাহিনুর ইসলামকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে আখাউড়া থানা-পুলিশ।
গত শনিবার দিবাগত রাতে ওয়াজ মাহফিল শেষে বাড়িতে ফেরার পথে আখাউড়ার রামধননগর এলাকায় ইসলামি বক্তা শরীফুল ইসলামের (৩৮) ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। হামলায় আহত শরীফুল সদর উপজেলার চাপুইর গ্রামের কাজী আবদুর রফিক ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি বিজয়নগর উপজেলার শ্রীপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক এবং সদর উপজেলা ইসলামি যুবসেনার সাধারণ সম্পাদক।
এ ঘটনায় গত রোববার রাতে আহত ব্যক্তির চাচা মাওলানা আবদুল বাছির ভূঁইয়া বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উইং কমান্ডার মুমিনুল হক বলেন, ইসলামি বক্তার ওপর হামলার বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে আলোচিত হলে র্যাবের একাধিক দল ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হামলায় জড়িত আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে র্যাব। গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে মামলার এজাহারনামীয় আসামি জাকিরসহ মাহবুবুল, সুমন ও আমিরুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একাধিক অভিযানকারী দল।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ইসলামি বক্তা শরীফুল ইসলাম বিজয়নগরের দৌলতবাড়ি দরবার শরিফে ওই বক্তব্য দেন। মাহফিলে তার বক্তব্যের কিছু অংশ আসামিদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। এ জন্য তারা ইসলামি বক্তার ওপর খেপে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর জেরে মাহফিল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে আসামিরা তার ওপর অতর্কিত হামলা চালান। হামলায় ওই বক্তার জিব কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গা জখম হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বিশেষ গোষ্ঠীর অনুসারী কি না, জানতে চাইলে র্যাবের কমান্ডার মুমিনুল হক বলেন, আমরা ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জড়িত থাকার কথা র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে ধর্মীয় কোনো সংগঠনের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বাকি বিষয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে উদ্ঘাটন করবেন।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুল ইসলাম বলেন, হামলায় জিব কেটেছে সত্য। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে, জিব টেনে কেটে ফেলা হয়েছে, ঘটনা তেমন নয়।