কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চলছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৩-২৪ মেয়াদে নির্বাচনের দুদিনব্যাপী ভোটগ্রহণ। পূর্বঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল ১০টায় প্রথম দিনের ভোট শুরু হয়। তবে ভোটের আগের দিন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান বিচারপতি মো. মনসুরুল হক চৌধুরীর পদত্যাগ ঘিরে ভোটকেন্দ্রে কিছুটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করতে দেখা গেছে। ভোটারদের মাঝেও রয়েছে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
তবে ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে বুধবার সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সকাল থেকেই দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি। রয়েছেন সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও।
সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোট ঘিরে এদিন সকাল ৮টার আগেই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন আইনজীবীরা। প্রথম দিন সাড়ে আট হাজারের বেশি আইনজীবীর ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানের পদত্যাগ ঘিরে নতুন আহ্বায়ক কে হবেন, তা নিয়ে আওয়ামীপন্থি সাদা প্যানেল ও বিএনপিপন্থি নীল প্যানেলের প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন। একপর্যায়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগানও চলে। রাত আটটার দিকে আইনজীবী সমিতির তৃতীয় তলায় সেমিনার কক্ষে বক্সে রাখা ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। যদিও এ নিয়ে নীল প্যানেলের প্রার্থী-সমর্থকদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
এবারের নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল আইনজীবী শাহ খসরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপ–কমিটি ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে আইনজীবী এ জেড এম ফরিদুজ্জামান আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনার উপ-কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে গত ২ মার্চ উভয়পক্ষের সম্মতিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট উপ-কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু ভোটের আগের দিন তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে ২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ৬০২ জন আইনজীবী। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন— সহ-সভাপতি পদে মোহাম্মদ আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা, ট্রেজারার পদে মাসুদ আলম চৌধুরী, সহ-সম্পাদক পদে নুরে আলম উজ্জ্বল ও হারুনুর রশিদ।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মনোনীত সাত প্রার্থী হলেন— মো. সাফায়েত হোসেন সজীব, মহিউদ্দিন রুদ্র, শফিক রায়হান শাওন, সুভাষ চন্দ্র দাস, নাজমুল হোসেন স্বপন, মো. দেলোয়ার হোসেন, মনিরুজ্জামান রানা।
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি পদে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন— সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির মঞ্জু, সরকার তাহমিনা সন্ধ্যা, সহ-সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ পদে রেজাউল করিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে অ্যাডভোকেট আশিকুজ্জামান নজরুল, ফাতিমা আক্তার, ফজলে এলাহি অভি, ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ ও রাসেল আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একজন সভাপতি, একজন সহ-সভাপতি ও সদস্য পদে আরও একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সম্পাদকসহ সাতটি পদে আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। আর সহ–সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ অপর সাতটি পদে আছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।