শুভেচ্ছা স্বাগত মাহে রমজান

সম্পাদকীয়

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

শুভেচ্ছা স্বাগত মাহে রমজান। খোশ আমদেদ মাহে রমজান। ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সুসংবাদ নিয়ে বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র রমজান মাস। এক মাসজুড়ে সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মুসলমানরা এ তিন ধাপে ইবাদত, বন্দেগি করে স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণের প্রশান্তি লাভ করবেন। রমজান মহিমান্বিত মাস। জেনে, না জেনে কোনো মুসলমান প্রায় বছরজুড়ে যেসব পাপ করেন, তার সেগুলো থেকে স্রষ্টার ক্ষমা পাওয়ার বিশেষ সুযোগ নিয়ে আসে রমজান। এ মাসে তাই সিয়াম সাধনায় ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ পুুরো পৃথিবীর মুসলমান নাজাতের পথ খুঁজবেন এক স্রষ্টার কাছে।

স্রষ্টা রমজান মাসে তার বান্দাদেরকে কঠোর ত্যাগ, ধৈর্য, উদারতা, সততা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। রমজান আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি আত্মসংযমেরও মাস। দুঃখজনক হচ্ছে, এ দেশের একশ্রেণির অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর মধ্যে আত্মসংযম, সততার লেশমাত্র দেখা যায় না রমজানে। এ মাস সামনে রেখে নানা কৌশলে তারা সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকেন। লজ্জাজনক হলেও সত্য, এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। আবার প্রতিবার রোজা শুরুর আগে ‘রোজায় দাম বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থার’ যে গৎবাঁধা হুমকি কর্তৃপক্ষের থাকে, সেটা এবারো ছিলো। তবে ‘কঠোর ব্যবস্থার’ তেমন প্রতিফলন বাজারে দেখা যায়নি।

মত ও পথসহ সহযোগী গণমাধ্যমগুলোর বাজার বিষয়ক প্রতিবেদন বলছে, রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম এবার গতবারের রমজানের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। অনেক পণ্যের চাহিদা থাকলেও কম আয়ের মানুষের পক্ষে সেগুলো কেনা সম্ভব নয়। গত ১৯ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার রোজায় দামের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় গত রমজানের তুলনায় সব অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের চাহিদা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম থাকবে। কারণ, উর্দ্ধগতির কারণে সেসব পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। মূলত বাজার ব্যবস্থাপনায় ঘাটতিজনিত কারণেই দেশে অনেক পণ্যের দাম লাগামছাড়া।

তবে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বিশেষ কারণ বিশ্ববাজারে দাম বাড়া। আর্ন্তজাতিক বাজারের পরিস্থিতির বাইরে আমাদের দেশের বাজারকে রাখা সম্ভব নয়। যেমন, বাজারে ভোজ্যতেল, চিনি, গম, মসুর ডাল, ছোলার সরবরাহ আমদানিনির্ভর। এসব পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে। আবার মার্কিন ডলারের দাম বাড়ায় আমদানির খরচ বেড়েছে। ফলে পণ্যগুলোর দাম বেশি। এটাও সত্য, আর্ন্তজাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে কোনো দেশে সেই পণ্যের দামটা যেন ব্যবসায়ীরা খেয়ালখুশিমতো নির্ধারণ করতে না পারেন, সেজন্য দরকার সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা।

বাজার ব্যবস্থাপনা যথাযথ না হওয়ায় বিশ্ববাজারের উপর আমদানি নির্ভরতা না থাকা পণ্যের দামও এবারের রমজানে চড়া। অর্থাৎ, দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে। যেমন, দেশীয় পণ্য শসা, পেঁয়াজ, ব্রয়লার মুরগির দাম। তাই বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে অতি লোভী ব্যবসায়ীদের নিত্যপণ্যের দাম যাচ্ছেতাইভাবে নির্ধারণের কোনো যুুক্তি নেই।

দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে বেশি কষ্ট হয় সাধারণ মানুষের। তাদের যেন কোনো ধরনের দুর্ভোগ না হয়, সেজন্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির মাধ্যমে রমজানে জিনিসপত্রের দাম যুক্তিসঙ্গত নিয়ন্ত্রণে রাখার জোরালো দাবি জানাই আমরা। কঠোর পদক্ষেপ নিলে বাজার সিন্ডিকেট দমন করে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ আর দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। বাজার সিন্ডিকেটের হোতাদের তাই আইনের আওতায় আনা হোক। বাজার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা আমরা দেখতে চাই।

ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ত্যাগ, কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখতে দেশের সব মুসলমান রমজানে সচেষ্ট হবেন। সবাই ব্যক্তি জীবনে, পরিবারে ও সমাজে রমজানের পুণ্যশীলতার আবহ ও আহ্বানকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন