ডজনখানেক তদারক সংস্থা থাকলেও পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সুফল মেলে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইন রয়েছে। বাজার তদারকির দায়িত্বেও আছে এক ডজনের বেশি সংস্থা বা অধিদপ্তর। তবে আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই। আবার দুই-তিনটি ছাড়া বাকি সংস্থাগুলোর কোনো তদারকিও চোখে পড়ে না। আর সুযোগটি লুফে নিচ্ছে উৎপাদক ও আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা দোকানি পর্যন্ত সর্বস্তরের ব্যবসায়ী।

যে যার মতো সুযোগ বুঝে অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। দাম বাড়ানোর জন্য একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। আর দামের ভারে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। এই বিষাক্ত চক্রের কবলে পড়ে অনেক পণ্য এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

universel cardiac hospital

অবশ্য পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখার কাজে নিযুক্ত সংস্থাগুলোর দাবি, তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। কারও কারও মন্তব্য– মজুত, কালোবাজারি, অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে তাদের হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অনেক কারণ থাকে। স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। শুধু তদারকি সংস্থা আর আইন থাকলেই হবে না। সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে অযথা খুচরা বাজারে গিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে সুফল আসবে না।

তাদের মতে, এ জন্য বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে এসব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তবেই সাধারণ মানুষ সুফল পাবে।

নিত্যপণ্যের বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি মনিটরিং টিম রয়েছে। এ ছাড়াও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশন, স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ঢাকা সিটি করপোরেশন, র‍্যাব এবং জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করে। সরকারের হাতে আছে বিশেষ ক্ষমতা আইন।

রমজান উপলক্ষে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে রয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর মনিটরিং টিম। বাজার নিয়ন্ত্রণে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাজের সুবিধার জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আইন। যেমন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯, কৃষি বিপণন আইন-২০১৮।

সংস্থাগুলোর নিজ নিজ আইন অনুযায়ী, সারাবছর মাঠে থাকার কথা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাাশি অনিয়ম ও ভেজালের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার নির্দেশনাও আছে। কিন্তু এসব টিমের তদারকি তেমন চোখে পড়ে না।

সংস্থাগুলো হাত গুটিয়ে বসে থাকা, আইনের শিথিল প্রয়োগের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ পর্যন্ত অসাধু কোনো ব্যবসায়ীকে তার অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার নজির নেই। শুধু প্রতি বছর রমজানকে কেন্দ্র করে মাঠে তাদের কিছু হাঁকডাক দেখা যায়, যা শেষ পর্যন্ত কোনো সুফল দেয় না।

এর মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরে তদারকি কিছুটা বেশি দেখা যায়। মাঝেমধ্যে অভিযানে যায় বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। অভিযানে কিছু ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তির আওতায় আনা হয় না। ফলে এসব অভিযানকে আমলে নেয় না ব্যবসায়ীরা।

প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানকে সামনে রেখে লাগামহীনভাবে বেড়েছে পণ্যের দাম। চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, ছোলা, বেগুন, সবজি, দুধসহ এমন কোনো পণ্য নেই, যেটির দাম বাড়েনি। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ।

এ ব্যাপারে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তদারকি প্রতিষ্ঠান আছে, আইনও আছে। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ ও সংস্থাগুলোর সক্ষমতার বাস্তবায়ন নেই। এগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা না গেলে বাজারে বিশৃঙ্খলা থেকে যাবে।

শেয়ার করুন