জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে বিশেষ অধিবেশন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বেলা ১১টায় অধিবেশন বসবে। এর আগে ২১ মার্চ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অধিবেশন আহ্বান করেন।
এটি একাদশ জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশন এবং জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ উপলক্ষ্যে বিশেষ অধিবেশন। চার থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মতো চলতে পারে এই অধিবেশন। বিশেষ এই অধিবেশন শুরুর পরের দিন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্মারক বক্তব্য দেবেন। এছাড়াও ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব এনে তা গ্রহণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা প্রস্তাবটি উত্থাপন করবেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয়। সে অনুযায়ী ৭ এপ্রিল ৫০ বছর পূর্ণ হবে জাতীয় সংসদের।
এ প্রসঙ্গে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ১৯৭৩ সালের ওইদিন জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে আমরা বর্তমান জাতীয় সংসদের ৫০ বছর অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। এ কারণে ৭ এপ্রিল আমাদের জাতীয় সংসদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন বলেন, জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি গৌরবের বিষয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে এই সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমরা তা উদ্যাপন করতে যাচ্ছি। এটি গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সংসদের অধিবেশন শুরুর পর যথারীতি ওইদিন শোকপ্রস্তাব উত্থাপন ও গ্রহণসহ দিনের নিয়মিত কার্যসূচির মধ্য দিয়ে বৈঠক শেষ হবে। পরদিন ৭ এপ্রিল শুক্রবার শুরু হবে বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম। এদিন বৈঠক বসবে বিকালে। এই অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্মারক বক্তব্য দেবেন।
এ ছাড়া সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে এদিন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা স্মারক ডাকটিকিট উন্মুক্ত করবেন। পরদিন ৮ এপ্রিল বেলা ১১টায় অধিবেশন শুরু হবে। এদিন সংসদনেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করবেন এবং এর ওপর বক্তব্য দেবেন। তার বক্তব্যের পর সরকার ও বিরোধী দলসহ অন্য সদস্যদের আলোচনার সুযোগ দেওয়া হবে। ৮ ও ৯ এপ্রিল দুই দিন আলোচনা শেষে সাধারণ প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে আগ্রহী সব সংসদ সদস্যকে আলোচনার জন্য সুযোগ দেওয়া না গেলে আরও একদিন সময় বাড়ানো হতে পারে বলে সংসদ সচিবালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের সংসদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করা হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মারক বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ওইদিনই জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে সংসদে একটি প্রস্তাব এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা। সেই প্রস্তাব নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতাসহ সরকারি ও বিরোধীদলীয় ৭৯ জন সংসদ সদস্য ১৯ ঘণ্টা ৩ মিনিট আলোচনা করেন। পরে তা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বিশেষ অধিবেশনে দেওয়া সবার বক্তব্য এক মলাটে এনে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অধিবেশন শুরুর আগে জাতীয় সংসদের কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা এই বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন। সকাল ১০টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও জাতীয় সংসদের ৫০ বছর অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রবীণ সংসদ সদস্যের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পারস্পরিক মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন, আন্তর্জাতিক সম্মেলনসহ আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে সংসদ সচিবালয়ের।