সুদানের সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
২৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সুদানে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি নাগরিকের অবস্থান রয়েছে।
ওই পোস্টে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে অন্য দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। খারতুমে বাংলাদেশ দূতাবাস এরই মধ্যে এ বার্তা সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রচার শুরু করেছে।
শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে, কীভাবে কোন পদ্ধতিতে তারা যাত্রা করবেন। সবাইকে দূতাবাসের নির্দেশনা মেনে নিবন্ধন এবং প্রয়োজনীয় কাজ করার অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনুরোধ করছি দূতাবাসে যোগাযোগ না করার জন্য। কারণ, সবাই ব্যস্ত এবং রুটগুলো নিরাপত্তার খাতিরে না জানানোই ভালো। আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
এর আগে গত শনিবার (২২ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুদানের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে সফর থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশি নাগরিকদের পরামর্শ দিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল।
আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ সুদানে গত ১৫ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত চারশো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। যাদের মধ্যে জাতিসংঘ কর্মীও রয়েছেন। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে টানা প্রায় ৪৮ ঘণ্টার আলোচনার পর সুদানে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দুপক্ষ। স্থানীয় সময় সোমবার মধ্যরাত থেকে ৭৩ ঘণ্টার এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর আগে দুই দফা চেষ্টা করেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা যায়নি।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে সুদানের অধিকাংশ হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। এছাড়া পানি ও বিদ্যুতের সরবরাহও বিঘ্নিত হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদের ঘরে মজুত খাদ্য ফুরিয়ে আসায় দেশটিতে মানবিক সংকট তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় বিদেশি রাষ্ট্রগুলো তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদেরও।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে শীর্ষ দুই সামরিক নেতার কাউন্সিলের মাধ্যমে সুদানের রাষ্ট্র পরিচালনা হচ্ছে। তারা হলেন- সুদানের সেনাবাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং দেশটির উপ-নেতা ও আরএসএফ কমান্ডার জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো।
ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা ও দেশটিতে বেসামরিক শাসন ফেরানোর প্রস্তাব ইস্যুতে দুই নেতার বিরোধ ঘিরেই ১৫ এপ্রিল সকাল থেকে যুদ্ধের সূত্রপাত। তবে কোন পক্ষের তরফ থেকে প্রথম আক্রমণ চালানো হয়েছে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।