ডলারের আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে

মত ও পথ ডেস্ক

ডলার
ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের মোট অর্থনীতির প্রায় ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে বিশ্বের মোট বৈশ্বিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বাণিজ্যের অর্ধেকেরও বেশি পরিচালিত হয় মার্কিন ডলারে। বোঝাই যাচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলার কতোটা শক্তিশালী।
বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলার বিনিয়োগকারীদের জন্য কয়েক দশক ধরে পছন্দের শীর্ষে। কিন্তু এটি এখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।

বিমান কিংবা তেল কেনা থেকে ঋণ নেওয়াসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বৈশ্বিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রায় সবকিছুর জন্য মার্কিন মুদ্রা গ্রিনব্যাককে ব্যবহার করা হয়। বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল অর্থনীতি, বিশেষ করে চীন মার্কিন মুদ্রার ওপর অত্যধিক নির্ভরতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল পলিসি ইনস্টিটিউটের ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের অধ্যাপক পাওলা সুবাচ্চি এএফপিকে বলেছেন, অনেক উন্নয়নশীল দেশের ডলারের ওপর কম নির্ভরশীল হওয়ার ইচ্ছা আছে, বিশেষ করে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে।

চলতি মাসে চীন সফরকালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেছেন, প্রতি রাতে তিনি নিজেকে প্রশ্ন করেন– ‘কেন সব দেশ ডলারের ওপর ভিত্তি করে বাণিজ্য করতে বাধ্য হয়?’ এর আগে তিনি বেইজিংয়ের সঙ্গে ইউয়ান এবং রিয়ালে লেনদেন করার চুক্তি করেন।

বাংলাদেশ সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৩০ কোটি ডলার সমান অর্থ রাশিয়াকে পরিশোধ করবে চীনের ইউয়ানে। ফ্রান্সের টোটাল এনার্জি থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার জন্য নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করবে বাংলাদেশ।

চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে পরিশোধ করবে আর্জেন্টিনা। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে ডলারের রিজার্ভ প্রকটভাবে কমে যাওয়ায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডলারের আধিপত্য আলোচনায় এসেছে। বিশ্ব দেখেছে ওয়াশিংটন এবং পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ক্ষেত্রে ডলারের আধিপত্যের সুযোগ নিচ্ছে।

শেনজেনভিত্তিক ফার্স্ট সিফ্রন্ট ফান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ল্যারি ইয়াং এএফপিকে বলেছেন, রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ডলারের আধিপত্যকে ব্যবহার করেছে। অন্যান্য দেশও উদ্বিগ্ন যে তারাও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে পারে। তাই তারা অর্থ প্রদান এবং নিষ্পত্তির জন্য অন্য মুদ্রা বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ল্যারি ইয়াং বলেন, চীনা ইউয়ানের (আরএমবি নামেও পরিচিত) আন্তর্জাতিকীকরণের অর্থ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক চুক্তির জন্য আরও বেশি দেশের মুদ্রা বেছে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। চীনের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক বাণিজ্যের ফলে আরএমবির আন্তর্জাতিকীকরণের মাত্রা বাড়বে এবং আরও ব্যবসায়িক অংশীদার আরএমবিকে অর্থ প্রদান এবং নিষ্পত্তির জন্য বেছে নেবে।

তবে সাও পাওলোর টেনডেনসিয়াস কনসাল্টোরিয়া কনসালট্যান্সির অর্থনীতিবিদ আলেসান্দ্রা রিবেইরো বলেছেন, ডলারের বিপরীতে প্রস্তাবগুলো প্রায়ই অর্থনীতির চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। যেমন চীনের পূর্ণ বাজার অর্থনীতি নেই। আরএমবি সরকারের স্বার্থের ওপর নির্ভর করে, এটি কৃত্রিমভাবে ইউয়ানের অবমূল্যায়ন করতে পারে। ফলে ইউয়ানে অর্থ প্রদান করলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এসব সত্ত্বেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মাত্রা ক্রমেই কমছে।

শেয়ার করুন