প্রতিবছর ঈদের আগে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কিন্তু এবারই দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ঈদুল ফিতরের মাসে কমেছে রেমিট্যান্স। এপ্রিল মাসে বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬৮ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে এসেছে। এই অঙ্ক চলতি বছরের মার্চ ও আগের বছরের এপ্রিল এ দুই সময়ের তুলনায়ই কম।
মঙ্গলবার (০২ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ও দ্বিতীয় মাস আগস্টে টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এরপর টানা ছয় মাস কেটে গেলে দুই বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছাতে পারেনি রেমিট্যান্স। অবশেষে অর্থবছরের নবম মাস মার্চে এসে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় রেমিট্যান্স। অতিক্রম করে দুই বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক।
এদিকে সদ্য বিদায়ী মাস এপ্রিলের শুরুতে আশা জাগিয়েছিল রেমিট্যান্স। ঈদের আগের দিন সাড়ে ৬ কোটি ডলার করে এসেছিল। আশা করা হচ্ছিল এপ্রিলেও দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে রেমিট্যান্স। তবে ঈদের পর ভাটা পড়ে। মাস শেষে আসে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১৮ হাজার ১৩ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মহান স্বাধীনতার মাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর পর এপ্রিলের শুরু থেকেও ভালো রেমিট্যান্স এসেছে। প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সামনে কোরবানি আছে, আগামীতে আরও বাড়বে রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের পুরো সময়ে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার বা ১৮ হাজার ১৩ কোটি টাকার বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। গত ২০২২ সালের একইমাস (এপ্রিল) এসেছিল ২০১ কোটি ডলার, সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ কোটি ডলার কম এসেছে। আবার চলতি বছরের মার্চ মাসে এসেছিল ২০১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, সে হিসাবে গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলেও প্রায় ৩৩ কোটি ডলার কম এসেছে।
আলোচিত সময়ের মধ্যে বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের প্রবাসী আয়। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
বরাবরের মতো এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেেশের মাধ্যমে। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ৪২ কোটি ২৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স এসেছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে। নতুন এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ০.০১ মিলিয়ন ডলার। তবে পরিমাণে কম হলেও রেমিট্যান্স আসাকে ইতিবাচক বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামীতে এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়বে বলে আশা তাদের।
তবে আলোচিত সময়ে ৭ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো প্রবাসী আয় দেশে আসেনি। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়ীত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব, বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে টানা ছয় মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থেমে যায় রেমিট্যান্স আসার প্রবাহ। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে প্রায় ১৭০ কোটি ডলার বা ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার, জানুয়ারি মাসে এসেছে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার, ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। আর স্বাধীনতার মাস মার্চ মাসে এসেছে ২০১ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের বেশি রেমিট্যান্স।
আশা করা হচ্ছিল এপ্রিল মাসেও দুই বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করবে, যেহেতু ঈদুল ফিতর পড়েছিল এপ্রিলে। মাসটির শুরুতে সেভাবেই আসছিল রেমিট্যান্স, আশা করা হয়েছিল দুই বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করবে। তবে সে আশা ফিকে করে মাসটিতে এলো ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স।
এর আগে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে মোট ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।