কোহিনূরখচিত মুকুট কেন পরবেন না ক্যামিলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের আনুষ্ঠানিক অভিষেক হচ্ছে আজ শনিবার। একই সঙ্গে কুইন কনসর্ট হিসেবে অভিষেক হতে যাচ্ছে তার স্ত্রী ক্যামিলারও। তবে অভিষেকের এ রাজকীয় আয়োজনে চার্লসের স্ত্রী কুইন কনসর্ট ক্যামিলার মাথায় দেখা যাবে না কোহিনূরখচিত মুকুট। একটি রাজকীয় সূত্র যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমকে বলেছে, ‘রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা’য় যাতে আঘাত না লাগে, সে জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কথিত আছে, এই হীরা পুরুষদের জন্য শুভ নয়। তাই এটি সব সময় নারীরা পরে থাকেন। এই হীরা প্রথম পরেছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া, এরপর রানি কনসর্টস ম্যারি এবং আলেকজান্দ্রা। আর সর্বশেষ ১৯৫৩ সালে পরেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। খবর ডয়চে ভেলের।

universel cardiac hospital

রাজ্যাভিষেকের আয়োজনে ক্যামিলার মাথায় কোহিনূর হীরাখচিত মুকুট না থাকা একটি বড় ঘটনা। কিন্তু কেন? কোন জিনিস এই হীরাকে ঐতিহাসিকভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে?

ইতিহাসবিখ্যাত কোহিনূর হীরাটি ১০৫ ক্যারেটের। যুক্তরাজ্যে আসার আগে এটি ছিল ১৯০ ক্যারেটের। এটির আকৃতি ছিল অনেকটা অদ্ভুত। উইলিয়াম ডালরিম্পল ও অনিতা আনন্দ ২০১৭ সালে তাঁদের লেখা বই ‘কোহিনূর: দ্য হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ইনফেমাস ডায়মন্ড’-এ লিখেছেন ‘এটি দেখতে অনেকটা পাহাড়ের চূড়ার মতো বা একটি বিশাল বরফখণ্ডের মতো, যা খাড়াভাবে ঊর্ধ্বমুখী।’

পারস্যের ইতিহাসবিদ মোহাম্মদ কাজিম মারভি প্রথম তাঁর লেখায় এই হীরার কথা উল্লেখ করেন। তিনি ১৮ শতকের মাঝামাঝি যোদ্ধা নাদির শাহের ভারত আক্রমণের বিষয়টি নথিভুক্ত করেছিলেন।

এই মূল্যবান রত্নটি ঠিক কোথা থেকে এসেছে, এটি এখনো পণ্ডিতেরা নিশ্চিত নন। তবে বিশ্বাস করা হয়, এটি দক্ষিণ ভারতের গোলকুণ্ডার পলিমাটির নিচে পাওয়া গিয়েছিল। এটি মোগলদের হাতে আসার আগে মধ্যযুগের প্রথম দিকে তুর্কিদের হাতে এবং তারপর ভারতের বেশ কয়েকটি ইসলামি রাজবংশের হাতে ছিল।

কিন্তু সেসব রাজবংশ পালাক্রমে পারস্যের নাদির শাহের কাছে এটি হারায়। নাদির শাহ এটির নামকরণ করেছিলেন কোহ-ই-নূর বা আলোর পাহাড়। নাদির শাহের মৃত্যুর পর হীরাটি এলো তাঁর অন্যতম সেনাপ্রধান আহমদ শাহ দুরানির হাতে, যিনি তখন আফগানিস্তানের আমির। এরপর এটি এক শ বছর ধরে আফগানদের হাতে ছিল। কিন্তু ১৮১৩ সালে পাঞ্জাবের পালিয়ে আসা এক আফগানের কাছ থেকে রাজা রঞ্জিত সিং এটি জোর করে আদায় করেন।

১৮৩৯ সালে রঞ্জিত সিংয়ের মৃত্যুর পর পাঞ্জাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই সাম্রাজ্য জয় করে। রঞ্জিত সিংয়ের ১০ বছর বয়সী ছেলে দুলীপ সিংকে ব্রিটিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। ১৮৫৫ সালে দুলীপ সিংয়ের অভিভাবক স্যার জন স্পেন্সার লগিন কোহ-ই-নূরটি ভারতের গভর্নর-জেনারেল ডালহৌসির কাছে হস্তান্তর করেন।

ডালহৌসি রানির কাছে রত্ন পাথরটি দেওয়ার আগে এর ইতিহাস নথিভুক্ত করতে একজন তরুণ অফিসার থিও মেটকাফকে নিয়োগ দেন। তাঁর কাজ ছিল গবেষণা করে হীরার ইতিহাস লেখা।

এরপর রানি ভিক্টোরিয়া ইংল্যান্ডে হীরাটি প্রদর্শন করার পর এটির খ্যাতি শীর্ষে পৌঁছায়। আনন্দ এবং ডালরিম্পল তাদের বইয়ে লিখেছেন, ‘এটি ছিল বিজয়ী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধিপত্যের প্রতীক’।

ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরানও এই মূল্যবান হীরার ওপর নিজেদের দাবি জানিয়ে আসছে।

শেয়ার করুন