‘সেদিন থেকে আওয়ামী লীগ ও দেশের জনগণই আমার পরিবার’

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যেদিন ফিরে এসেছিলাম, পেয়েছিলাম এদেশের জনগণকে আর আমার আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে। সেদিন থেকে আওয়ামী লীগ ও দেশের জনগণই তো আমার পরিবার।

বুধবার (১৭ মে) গণভবনে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শুভেচ্ছা জানাতে আসা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের এদিন দেশে ফিরে আসেন।

এদিন শুভেচ্ছা জানাতে আসা নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব স্বাভাবিকভাবে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বা যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে, যেন আমাদের অর্জনগুলো নস্যাৎ হয়।

জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা দেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে, বাকিগুলো লুটেরার দল, তারা দেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে না। সে কথা মাথায় রেখে ওই সন্ত্রাসের দল, খুনির দল, ওই যুদ্ধাপরাধীদের দল যেন আর দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে সবাইকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানাই।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চোর যারা ছিল, ডাকাত, রীতিমতো ভোটডাকাত যারা ছিল, তারাই এখন গণতন্ত্র চায়, ভোটের অধিকারের কথা বলে। যাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে, তাদের কাছে শুনতে হয় এসব কথা। এগুলো মাঠের কথা মাঠে থাকবে, আমরা জনতার সঙ্গে থাকবো, জনতার পাশে থাকবো।

জনগণের আস্থাই আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে তাদের ভোটের মাধ্যমেই তো আমরা সরকারে এসেছি। তাদের বিশ্বাস-আস্থাটাই আমাদের একমাত্র শক্তি। আর কোনো শক্তি নেই। বাংলাদেশের জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র বন্ধু।

আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচনী পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা এনেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে অনেকে কথা বলে, ভোটের অধিকার নিয়ে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ভোটের অধিকার কবে ছিল। ৭৫ সালের পর থেকে যেভাবে ভোট চুরি, ভোট কারচুপি, ভোট নিয়ে খেলা, মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা, বরং আওয়ামী লীগেরই নানা পদক্ষেপের ফলে আজ বিভিন্ন সংস্কার করে করে নির্বাচন পদ্ধতিটাকে গণমুখী করা, জনগণের ভোট সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’ এ স্লোগান দিয়ে মানুষকে যে ভোট সম্পর্কে সচেতন করা- এটা তো আওয়ামী লীগই করেছে। এটা তো আর কারও না। তারপর নির্বাচন কমিশন করার জন্য আইন করে দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে ভুয়া ভোট দিয়ে ভোটার তালিকা হতো সেখানে ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, নির্বাচনী পদ্ধতিকে যতটুকু সংস্কার করে নিয়ে আসা বা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন এগুলোতো আওয়ামী লীগেরই করে দেওয়া। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স সবই করে দিয়েছি আমরা। তারপরও কেউ যখন আমাদের ছবক দিতে আসে, গণতন্ত্রের, নির্বাচনের ছবক দিতে আসে।

দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করার নির্দেশনা দিয়ে নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়নের গতি যাতে ত্বরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবে এটাই আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা। কাজেই জাতির পিতার যে স্বপ্ন দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি, জাতির পিতার সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে শুধু উন্নয়নশীল দেশ উত্তরণ না, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সেটাও আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, সততা থাকলে আর উদ্দেশ্যটা যদি সৎ হয়, তাহলে যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্য আনা যায়। এ কথাটা সবসময় মনে রাখি। লক্ষ্য একটাই, দেশের মানুষের জীবনটা উন্নত করে দেওয়া। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেওয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছেন দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। সেই হাসি ফোটানো একমাত্র কর্তব্য। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, এটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ প্রতিজ্ঞা নিয়ে চলতে হবে। ধনসম্পদ কারও চিরদিন থাকে না। আর মরলেও মাটির নিচে হবে, কেউ কিছু সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু বেশি করলে বদনামটা নিয়ে যেতে হয়।

মানুষের কল্যাণে কাজ করার তৃপ্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যখন একজন ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর দেই তাদের মুখের হাসি আর চোখের পানি যখন একাকার হয়ে যায়, আমি মনে করি এর চেয়ে বড় পাওয়া এবং স্বার্থকতা আর কিছু নেই।

এসময় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, শাহাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেসবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি ও সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন