কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন ও ভবিষ্যতকে আলিঙ্গন করার মানসিকতা নিয়ে পরিবর্তনের কারিগর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত ‘বাংলাদেশ: একটি উন্নয়ন মডেল: শেখ হাসিনার কাছ থেকে শেখা’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি এ আহবান জানান। তিনি বলেন, নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করুন এবং পরিবর্তনের কারিগর হোন।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করুন, আপন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মনোনিবেশ করুন এবং দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করুন। আপন লোকজন ও দলের ওপর বিশ্বাস রাখুন। মাতৃ চেতনাকে জাগ্রত করুন এবং নতুন ও ভবিষ্যতকে আলিঙ্গন করুন। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রামের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, আমরা জ্ঞানভিত্তিক, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই। স্মার্ট দেশে একটি স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনসংখ্যা, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট জনশক্তি থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা হবে, যাতে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অবদান রাখতে পারেন। স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে, পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা।
শেখ হাসিনা বলেন, লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করছি। সারাদেশে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে। আমাদের সরকার ন্যানো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস বা প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সমাজে নারীদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ। এটিকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, নিরক্ষরতা ইত্যাদি দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে কষ্টার্জিত উন্নয়ন কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়। এটা আমাদের নারী-পুরুষের সম্মিলিত কাজ। আমি শুধু তাদের কাঙ্খিত পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তবে আজকের অবস্থানে পৌঁছানো সহজ যাত্রা ছিল না। কারণ, আমাকে অনেক অগ্নিপরীক্ষা ও নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। আমার বাবাকে তাঁর জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে। সন্তানরা তাঁর স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। স্বাধীনতা লাভের পর সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই দেশের প্রতিষ্ঠাতা, আমার পিতা বঙ্গবন্ধুকে আমার মা, তিন ভাই, দুই ভগ্নিপতি এবং এক চাচা সহ আমাদের পরিবারের ১৮ জন সদস্যের সঙ্গে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি বাবার দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও নিরক্ষরতামুক্ত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার নিয়ে দেশে এসেছি। ফিরে এসে তিনি খাদ্য ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছি। আমি বারবার অন্তরীণ ছিলাম।
তিনি আরো বলেন, আমার জীবন নাশের জন্য কমপক্ষে ১৯ বার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর ছিল ২০০৪ সালের আগস্টে, যখন হত্যা করার জন্য আমার উপর এক ডজন আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। আমি বেঁচে গিয়েছি, কিন্তু আমার দলের ২২ জন নেতাকর্মী নিহত এবং কয়েক শতাধিক আহত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিনি শুধু দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। আমি যতোদিন বেঁচে থাকবো, ততোদিন আমি সংগ্রাম চালিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ। আমার স্বপ্ন হলো- আমাদের ব-দ্বীপকে আবারও সমৃদ্ধির দেশে পরিণত করা।
তিনি বলেন, তাদের দল ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে পুনঃনির্বাচিত হয়। এরপর থেকে টানা দুই মেয়াদে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ একটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। সরকার সেই অবস্থা থেকে দেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশে রূপান্তরের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, আমরা এলডিসি অবস্থান থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবস্থার অবসান ঘটানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রায় সব আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সন্তোষজনক অগ্রগতি অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে আমরা এখন নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ব্যাপারে বিশ্বের সেরা দশটি দেশের মধ্যে আছি। বাংলাদেশই সম্ভবত একমাত্র দেশ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদ উপনেতার সবাই নারী।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারি সংস্থাগুলোতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষিত আসন রয়েছে। তিনি আশ্রায়ন নামে একটি প্রকল্প চালু করেছেন, যার মাধ্যমে আধা-পাকা ঘর তৈরি করে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
