বৈশ্বিক সংকট, আইএমএফ-এর ঋণের শর্ত ও সীমিত রাজস্ব আয়-এই ত্রিমুখী চাপে চূড়ান্ত হয়েছে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। সেখানে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি চলতি সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। বড় অঙ্কের ব্যয় মেটাতে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকার মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এটি অর্জন করতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৬৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করতে হবে। এরপরও মোট আয় ও ব্যয়ের মধ্যে যে ব্যবধান (ঘাটতি), তা নতুন অর্থবছরের জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের ঘরে রাখা হয়েছে। টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাজেট (অনুদানসহ) ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য উল্লিখিত বাজেট চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এটি ১ জুন মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যা প্রস্তাবিত বাজেট হিসেবে দীর্ঘ আলোচনার পর ২৫ জুন পাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটি কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে।
এ বছর বাজেটে বড় চাপ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত। এগুলো ঋণ দেওয়ার প্রথম বছরেই বাস্তবায়ন করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে কর রাজস্ব আদায়ের অঙ্ক চলতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। কারণ, আইএমএফ-এর হিসাবে আগামী অর্থবছরে কর রাজস্ব বাড়াতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া শর্ত অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র থেকে চলতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা কম ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমানোর শর্ত রয়েছে আইএমএফ-এর। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর ফলে সরকারের ঋণের যে ঘাটতি হবে, সেটি পূরণ করতে ব্যাপক হারে বাড়ানো হচ্ছে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা।
দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বেশি বৈদেশিক ঋণ আগামী অর্থবছরে নেওয়া হবে। আর ঋণগ্রস্ত বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বেশি টাকা গুনতে হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। এ ছাড়া বাড়ছে সরকারের মূলধন ব্যয়ও।
আসন্ন বাজেটের মূল শিরোনাম হচ্ছে ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ ওপরে হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। বর্তমান নানা ধরনের সংকটের মধ্যেও স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১-এর স্বপ্ন দেখাবেন অর্থমন্ত্রী। যদিও সেখানে পৌঁছতে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া উচ্চপ্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপি।
আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। অর্থ বিভাগ ধারণা করছে, ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমছে। আগামী দিনে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য কমবে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতিতে।