ঢাকায় এক দশকের বেশি সময় পর সমাবেশ করেছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াত। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে গতকাল শনিবার আয়োজিত ওই সমাবেশে তাদের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দলের তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বলছে, এটি ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বেইমানি।
২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে জামায়াত। ২০১৩ সালে আদালতের রায়ে দলটির নিবন্ধনও বাতিল হয়। ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারির পর কর্মসূচি পালনে প্রশাসনের অনুমতি পায়নি দলটি। সারাদেশে জামায়াতের কার্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে ফের অনুমতি চাইতে শুরু করে দলটি। সর্বশেষ শনিবার কোনো মিলনায়তনের বাইরে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও একটি মিলনায়তনে সমাবেশের অনুমতি দেয় প্রশাসন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরের গণহত্যার দায়ে উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলটি দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না। এই দলকে সরকার কেন সমাবেশ করতে অনুমতি দিয়েছে, তা বোধগম্য নয়। আমরা ক্ষুব্ধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়েও জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় দলটির অবিলম্বে বিচার হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩ থেকে বিভিন্ন আগুন সন্ত্রাসের যে ঘটনাগুলো দেশে ঘটেছিল, সেগুলো বিএনপি একা করেনি, এর সঙ্গে জামায়াতও জড়িত ছিল। এসব ঘটনার জন্য জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করতে যুক্তরাদ্ধের কংগ্রেসেও প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেই সন্ত্রাসী দলকে সরকার কোন বিবেচনায় রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে, তা কোনোভাবেই বোধগম্য হচ্ছে না। জামায়াতকে কোনোভাবেই রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না। প্রতিহত করতে হবে। দলটির রাজনীতি করার অর্থ হলো তাদের অপরাধকে বৈধতা দেওয়া। এটি হলে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি প্রসঙ্গে শনিবার বিকেলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তাদের মিটিং করার জন্য আমি অনুমতি দেওয়ার মালিক নই। এর চেয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
অবশ্য গত ৬ মে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, একাত্তরে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার করতে আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলমান। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারই একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করেছে। এবং যাদের বিচার হয়েছে তারা জামায়াতের হোতা ছিল, প্রতিষ্ঠাতা ছিল।