সহিংসতা চলছেই, মণিপুরের নারী মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আগুন

মত ও পথ ডেস্ক

মণিপুরের নারী মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আগুন। সংগৃহীত ছবি

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার মধ্যে রাজ্যটির একমাত্র নারী মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অব্যাহত সহিংসতার মধ্যে বুধবার (১৪ জুন) রাতে নারী ওই মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী ওই মন্ত্রীর নাম নেমচা কিপজেন। তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের ওই রাজ্যটির একমাত্র শিল্পমন্ত্রী। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

universel cardiac hospital

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে অব্যাহত সহিংসতার মধ্যে রাজ্যটির একমাত্র নারী মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে। বুধবার ইম্ফল ওয়েস্টের ল্যামফেল এলাকায় শিল্পমন্ত্রী নেমচা কিপজেনের বাসভবনে এই ঘটনা ঘটে।

অবশ্য নেমচা কিপজেন তখন বাড়িতে ছিলেন না বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশি অভিযান শুরু করে।

এনডিটিভি বলছে, নেমচা কিপজেন গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনে উপজাতি অধ্যুষিত কাংপোকপি বিধানসভা আসন থেকে রাজ্য বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের মন্ত্রিসভার একমাত্র নারী মন্ত্রী।

এছাড়া নেমচা কিপজেন রাজ্যটির ১০ জন কুকি বিধায়কের মধ্যে রয়েছেন যারা মণিপুরে একটি পৃথক প্রশাসনের দাবি জানাচ্ছেন এবং বিজেপির সাতজন কুকি বিধায়কের মধ্যেও নেমচা রয়েছেন।

এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় মণিপুরে ৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারীও রয়েছেন। রাজ্যটির খামেনলোক এলাকায় গভীর রাতে গুলি চালানোর ঘটনায় এই মৃত্যু হয়েছে বলে সেনাবাহিনীর সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য ইম্ফলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে কয়েকজনের শরীরে কাটা দাগ এবং একাধিক বুলেটের আঘাত রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

জাতিগত সংঘর্ষের কারণে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। আর সর্বশেষ এই ঘটনা মণিপুর রাজ্যে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় বড় ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। মূলত মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষের কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যটি অস্থিতিশীল রয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে মণিপুর রাজ্যের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মাঝে উত্তেজনা চলছে। গত মাসের শুরুর দিকে স্থানীয় কুকি উপজাতিরা তফসিলি উপজাতির মর্যাদার দাবির প্রতিবাদে ৩ মে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশ ঘিরে ওই দিন পার্বত্য এই রাজ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা ওই সহিংসতায় ৭০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এতে কোটি টাকার সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

রাজ্যের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কুকি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে সেখানে দফায় দফায় আন্দোলনও হয়। মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ মেইতেই সম্প্রদায়ের। তারপরও ওই রাজ্যের মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের হাতে রয়েছে। ভারতের এই রাজ্যে তফসিলি উপজাতিদের বাইরে পাহাড়ী এলাকায় অন্য কারও জমি কেনার অনুমতি নেই।

সম্প্রতি ভারতের হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিদের তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্যরা তফসিলি উপজাতিদের তালিকায় ঠাঁই পেলে রাজ্যে জমি কেনার অনুমতি পাবেন।

শেয়ার করুন